আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শিক্ষানবিশ হওয়ার পরিকল্পনা কাজে না লাগায় জীবনে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল লাসে স্টলি। তাই প্রায় দুই বছর আগে এই কিশোর জার্মানির ট্রেনে বসবাস শুরু করে।
একটি ছোট্ট সম্প্রদায়ের ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরের এই দীর্ঘ যাত্রা তাকে জার্মানির সুদূর উত্তর থেকে দক্ষিণ সীমান্ত ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। ২০২২ সালের আগস্টে শুরু করে সে সাড়ে ছয় লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে, যা পৃথিবীকে ১৫ বার প্রদক্ষিণ করার সমান দূরত্ব। এই দূরত্ব ভ্রমণে তাকে ট্রেনে বসতে হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ ঘণ্টা।
ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেন স্টেশনে এক সাক্ষাৎকারে স্টলি এএফপিকে বলেছে, ‘প্রতিদিন আমি কোথায় যাব এই সিদ্ধান্ত নিতে পারা অসাধারণ–এটাই স্বাধীনতা।’
তার কথায়, ‘ভ্রমণের সময় জানালা দিয়ে তাকাতে পারা এবং সামনের দৃশ্য দেখতে আমি পছন্দ করি। তাছাড়া আমি জার্মানির সব জায়গা ঘুরে দেখতে পারি।’
স্টলি একটি মাত্র ব্যাগ নিয়ে ভ্রমণ করে। ক্ষুধা নিবারণ করে পিৎজা ও স্যুপ দিয়ে। ট্রেনের পাসধারী হওয়ার ফলে ডয়চে বান স্টেশন লাউঞ্জে এগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
জটিলতায় শুরু
মুখে বিস্তীর্ণ হাসির দুর্বোধ্য কিশোরটি পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থাকার আরাম-আয়েশ বাদ দিয়ে ট্রেনে বসবাসের কঠিন জীবন বেছে নিয়েছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন।
শৈশবে ট্রেন নিয়ে তার আগ্রহ খুব বেশি ছিল না। তার ছিল না কোনও খেলনা ট্রেনও। ট্রেনে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে জার্মানির দ্রুতগতির ট্রেনে মাত্র দুবার সে ভ্রমণ করেছিল। ১৬ বছর বয়সেই ট্রেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে।
কিন্তু মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পর সে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে শিক্ষানবিশ হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। যা শেষ পর্যন্ত করা হয়ে ওঠেনি। কী করবে তা খুঁজতে গিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখতে পায় সে। ওই তথ্যচিত্র ছিল ট্রেনে বসবাসকারী একজনকে নিয়ে।
তার কথায়, ‘আমি ভেবেছিলাম আমিও তা করতে পারি। শুরুতে এটি ছিল মাত্র একটি আইডিয়া, অবাস্তব আইডিয়া। কিন্তু এরপর আমি তা ভাবতে থাকি। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেই আমি আসলেই এমনটি করব।’
শুরুতে অভিভাবকরা তাকে নিরুৎসাহিত করলেও পরে তারা সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। সে রেলের একটি কার্ড কিনে যা তাকে রেল নেটওয়ার্কে সীমাহীন ভ্রমণের সুযোগ দেয়। উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য শ্লেসউইগ-হোলস্টেইনের ফকবেক থেকে হামবুর্গ, সেখান রাতের ট্রেনে মিউনিখ।
শুরুর দিনগুলো ছিল কঠিন। রাতে ঘুমাতে পারত না স্টলি। তার রেলকার্ড তাকে বিছানা নিয়ে রাতে ট্রেনে ওঠার অনুমতি দিত না। তাকে নিয়মিত বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হতো।
কিন্তু ধীরে ধীরে সে ট্রেনে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সে একটি এয়ারবেড কিনে, যা দিয়ে দ্রুতগতির ট্রেনে রাতে বড় ব্যাগেজ এলাকায় ঘুমিয়ে নেয়।
এক বছর পরে নিজের ট্রাভেল কার্ড পাল্টে প্রথম শ্রেণির করে সে। এতে এক বছরের জন্য ব্যয় হয় ৫ হাজার ৮৮৮ ইউরো। এর মাধ্যমে সে আরও প্রশস্ত বগি ও ডয়চে বান লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পেয়ে যায়।
ট্রেন প্রেম
এখন আর ট্রেনে ঘুমাতে তার এয়ারবেডের প্রয়োজন হয় না। ট্রেনের সোজা সিটেও সহজে ঘুমিয়ে নিতে পারে সে। তবে সাধারণ বিছানায় এখন তার ঘুমাতে আরামবোধ হয় না।
সে বলে, ‘রাতে সাধারণ বিছানায় আমি ট্রেনের ঝাঁকির কিছুটা অভাববোধ করি ।’
চলাচলের মধ্যেই স্টলি কাজ করে। একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানির জন্য সে অ্যাপস প্রোগ্রামিং করছে। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে তার যাতায়াত নিয়মিত। মাঝে মাঝে ছোট শহরগুলোতেও হাজির হয় সে। সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও গেছে সে। তবে প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ ছাড়া ছিল না তার এই যাত্রা।
ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের যে শাস্তি দিল হার্ভার্ড
স্টলির কথায়, ‘বিলম্ব ও অন্যান্য ইস্যুগুলো দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।’
সে বলেছে, জানি না কতদিন এভাবে জীবনযাপন চালিয়ে যাব। হয়ত আরও এক বছর কিংবা পাঁচ বছর।
তার কথায়, ‘এই মুহূর্তে, আমি অনেক উপভোগ করছি এবং প্রতিদিন অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা পাচ্ছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।