জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে। এতে সরকারি দপ্তর ও আদালতের বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক করা, শিক্ষাঙ্গন খোলার পরিবেশ তৈরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুরক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপদেষ্টা কাউন্সিল মনে করে, একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যাত্রার প্রস্তুতির জন্যই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই প্রস্তুতির জন্য যেটুকু সময়ের দরকার, সেইটুকু সময় এ সরকার থাকবে। এ জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কত দিনের হবে হবে তা এখনই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
গতকাল শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যমুনার প্রধান গেটের বাইরে
এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আজকে (গতকাল) উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি প্রথম অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ছিল। আমাদের সবার মধ্যে কথা হলো, ভাব বিনিময়, মত বিনিময় হলো। আমাদের দপ্তর বণ্টন করে দেওয়া হলো।’
এ সময় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মেয়াদের বিষয় এখন আলোচনা করাটা, সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সম্ভব নয়। কারণ, জনগণ কী রিফর্ম (সংস্কার) চান? এটা না বুঝে আমি তো মেয়াদের কথা বলতে পারব না। আর রিফর্ম যদি আপনারা না চান, তা হলে আরেক কথা। এখনই মেয়াদ মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একটা গণতান্ত্রিক দেশে যাত্রা শুরু করতে পারি। সেটার প্রস্তুতির জন্যই তো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই প্রস্তুতির জন্য যেটুকু সময়ের দরকার, সেইটুকু সময় আমরা থাকব। শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের দিকে আমাদের যাত্রা।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছেÑ কীভাবে গণহত্যার বিচার করলে এটা স্বচ্ছ হবে এবং বাংলাদেশে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। সেটার জন্য আমরা কোন পথে যাব? সেই পথগুলো কী? এটা নিয়ে আমরা সবাই ভাবছি। এর উত্তর আপনারা সহসাই পেয়ে যাবেন। কিন্তু এটা নিশ্চিত করব যে আমরা প্রত্যেকটা গুলির বিচার চাইব। এটা (হত্যা) যেন আর না হয়। সেই রিফর্মের জন্য একটা স্বচ্ছ অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচারের প্রত্যয় রাখি।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কিছু কিছু আইন আছে, যেটা আপনারা (গণমাধ্যম) ভুক্তভোগী; যেমন- আইসিটি অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এখন আবার সাইবার সিকিকিউরিটি অ্যাক্ট। তবে আইসিটি এবং ডিজিটাল সিরিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল হলেও, এগুলোর অধীনে অনেকের শাস্তি হয়েছে। অনেকে জেলে আছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। হয়রানিমূলক মামলার মধ্যে এগুলো আনা হবে। কীভাবে এবং পরিবর্তন আনলে এই আইনগুলো স্বাধীন মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে নাÑ সেটা নিয়েও পরবর্তী সময়ে আলাপ-আলোচনা করা হবে।’
উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে আইনশৃঙ্খলার বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সময় ধরে আলোচনা করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেই আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এতে আইজিপি এসে যোগ দিয়েছেন। কিছু কিছু জায়গায় আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। এটি প্রতিরোধে ওই সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সংস্থাগুলো মিলে আপাতত একটা রক্ষাবলয় সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেমে যায়। আমরা সবাই মিলে যেন পুলিশকে সাহায্য করি। পুলিশের মতো একটা বাহিনীর যখন মনোবল ভেঙে যায়, তাদের কাজে তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য আমাদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা সাহায্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। আইন উপদেষ্টাকে (ড. আসিফ নজরুল) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উনি সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে কত দ্রুত বিচারকার্য শুরু করা যায় সেই ব্যবস্থা নেবেন।’ তিনি জানান, ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয়ে একদিন কথা বলবেন বলে আলোচনা হয়েছে।
রিজওয়ানা বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত দ্রুত সম্ভব খুলে দিতে হবে। আপনারা জানেন যে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, ছাত্ররা সেটা ব্যবস্থাপনা করছে। সে রকম প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি না যে কালই খুলে দেব। কিন্তু শিক্ষকসমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সব সেক্টরে রিফর্ম নিয়ে আমরা খুব কথা বলছি। এভাবে চলে না। এভাবে চলতে পারে না। সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হবে। সেই রিফর্মগুলো তো একা করা যাবে না। সমাজের সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা হবে। সব পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলা হবে। একটা রিফর্ম এজেন্ডা ঠিক করে তারপর আমরা আলোচনায় যাব।’ বৈঠকে অর্থনীতি বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসাকে উজ্জীবিত করার জন্য যত ধরনের সুরক্ষা নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। জনগণের জীবন-জীবিকার কষ্ট লাঘব করা, বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতেরÑ সেগুলোও অগ্রাধিকার পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।