জুমবাংলা ডেস্ক : ছাগল-কাণ্ডে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমান। বিতর্কিত এই ব্যক্তির সঙ্গে বেশ সখ্যতা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের, সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ পায়। এরসঙ্গে নতুন করে সামনে এসেছে গভর্নর ও মতিউরের একসঙ্গে ওমরাহ পালন করার বিষয়টি।
বুধবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আলোচিত মতিউরের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
ছবিতে দেখা যায়, গভর্নরের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন মতিউর। দুজনেই ওমরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক পড়ে আছেন। তাদের গলায় ঝুলছিলো ‘বাংলাদেশ’ লেখা ফিতাযুক্ত আইডি কার্ড।
তবে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ছাগল কাণ্ডে আলোচিত মতিউর ওমরাহ করতে গিয়ে কবে নাগাদ ছবিটি তুলেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাধারণত হজ্ব বা ওমরাহ’র মতো পবিত্র ও সংবেদনশীল ধর্মীয় কাজে খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া, অন্য কারো সাথে কেউ জুটি বাঁধেন না। মতিউরের মত ব্যাপক দুর্নীতিবাজ একজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের এই ঘনিষ্টতা তাই নানা প্রশ্ন ও ব্যাপক কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।
ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মতিউর রহমানকে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তদবির করেছিলেন তৎকালীন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
ছাগল কাণ্ডের মতিউর রহমানকে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ যেহেতু মতিউর রহমানকে আগে থেকেই ভালো করে চিনতেন, সেহেতু তিনি তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদারের তদবির আর ফেলতে পারেননি বলেও প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে আলোচনা শুরু হওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমানকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মতিউর রহমান কিছুদিন ধরে আলোচনায় আসেন তাঁর ছেলের কারণে। কোরবানির ঈদে সাদিক অ্যাগ্রো নামের একটি খামার থেকে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে।
সংবাদপত্র ও সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত হওয়া নিয়ে গত ২০ জুন বেসরকারি এক টেলিভিশনে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা প্রকাশ করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে শুধু মেয়ের নামে বিনিয়োগ করে ১ কোটি টাকায় ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছি। এই বাজার থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বানিয়েছেন বলে নিজেই দাবি করেছেন। বুদ্ধি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে কাজে লাগিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও মতিউর রহমান দাবি করেন।
এরপর ছাগল কাণ্ডের জের ধরে মঙ্গলবার (২৫ জুন) মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিও (বেনিফিশিয়ারি) হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইদিনে তাদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।