সুয়েব রানা, সিলেট : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম—‘পাড়ের টং’। এই গ্রামটি এখন পরিচিত ‘করলা গ্রাম’ নামে। চোখে পড়বে বাড়ির উঠোন, ছাদ কিংবা সামান্য খালি জায়গায় ঝুলছে সারি সারি করলা। শিশির ভেজা সকালে ঝকমক করে প্রতিটি করলা, যেন সবুজে ঘেরা এক নিখুঁত ছবি।
এই গ্রামে করলা শুধু একটি ফসল নয়—এটি এখন জীবিকা, উৎসব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। প্রায় প্রতিটি পরিবার যুক্ত কোনো না কোনোভাবে করলা চাষে। প্রবীণ থেকে তরুণ, এমনকি নারীরাও সমানতালে অংশ নিচ্ছেন সেচ, পরিচর্যা ও ফলন প্রক্রিয়ায়।
এই রূপান্তরের পেছনে আছে লাল তীর সীড লিমিটেডের হাইব্রিড জাত ‘টিয়া সুপার’ করলা। ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়, ফলে খরচ কম, লাভ বেশি। উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং মোটা আকৃতির এই করলা এখন কৃষকদের আস্থার নাম।
স্থানীয় চাষি ওয়াসিম মিয়া বলেন, “টিয়া সুপার আমাদের গ্রামের জন্য আশীর্বাদ। আমি প্রতি বছর প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার করলা বিক্রি করি। এখন গ্রামের অনেক তরুণও করলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।”
আরেক কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, “প্রায় ১০ বছর ধরে করলা চাষ করছি। এই জাত থেকে কখনোই ক্ষতিতে পড়িনি।”
করলার মৌসুমে গ্রামটিতে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ভিড় করেন করলা কিনতে। হবিগঞ্জের পাইকার রহিম মিয়া বলেন, “এখানকার করলার মান ও চাহিদা দুটোই বেশি। এবার অন্তত ৮-১০ লাখ টাকার করলা কিনতে পারবো বলে আশা করছি।”
এ গ্রামের করলার আরেকটি বিশেষত্ব হলো—বিষমুক্ত চাষ। অধিকাংশ কৃষকই জৈব সার ও স্বল্প মাত্রার কীটনাশক ব্যবহার করেন, ফলে ভোক্তার আস্থাও বেড়েছে।
লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, “চাষিরা আমাদের জাত নিয়ে সন্তুষ্ট। ফলন ভালো, রোগ কম হয়, মানও ভালো। পাইকারদের আগ্রহ রয়েছে এই করলার প্রতি।”
সরকারি সহায়তাও এই সাফল্যে ভূমিকা রেখেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, “চলতি বছর প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে করলা চাষ হয়েছে। সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বালাইনাশক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছি।”
এই গ্রামে করলা এখন শুধু ফসল নয়, এটি একটি রূপান্তরের নাম। স্কুলছাত্রীরা জানে করলার জাত, নারীরা জানে সঠিক পদ্ধতি। এ যেন কৃষির গণ্ডি ছাড়িয়ে এক সামাজিক বিপ্লব।
‘পাড়ের টং’ এখন শুধু একটি গ্রামের নাম নয়—এটি একটি গল্প, সম্ভাবনার প্রতীক, সবুজ স্বপ্নের বাস্তব রূপ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।