মুফতি আবদুল্লাহ তামিম : পবিত্র মাস রমজান চলে গেছে। এ মহান মাস আবার পাবো কিনা কেউ জানি না। এ মাস এসেছে, আবার চলেও গেছে। কিন্তু আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে গেছে তাকওয়া অর্জনের পথ। এ মাসের মতোই সারা বছর কীভাবে একজন মুমিন আমলের এ ধারা, তাকওয়া অর্জনের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারে এ বিষয়েই আজ কথা বলবো।
রোজা রাখার ধারাবাহিকতা
রমজানের রোজা শেষ হলেও অবশিষ্ট মাসগুলোতে বহু নফল রোজা রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী সেসব রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
শাওয়াল মাসের ছয় রোজা
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল। এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম : ১১৬৪)
প্রতি বৃহস্পতি ও সোমবার রোজা রাখা
নবীজি সা. বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল পেশ হোক এমতাবস্থায় যে, আমি তখন রোজাদার।’ (জামে তিরমিজি : ৭৪৭)
আরাফার দিনের রোজা
রসুলুল্লাহ সা. বলেন, আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, এর মাধ্যমে বিগত বছরের ও পরবর্তী বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহিহ মুসলিম : ১১৬২) এছাড়াও আশুরার রোজা, শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা।
নফল নামাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
রমজানের দীর্ঘ তারাবির নামাজ পড়ে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থেকে একসঙ্গে অনেক রাকাত নামাজ আদায় করার একটা ভালো অভ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। এ অভ্যাস পুরো বছরই রক্ষা করার চেষ্টা করা। সুন্নত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। দৈনিক ফরজ নামাজ ও নফল নামাজ আদায় করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ যেনো ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা। এছাড়াও ইশরাক, চাশত, তাহিয়্যাতুল অজু, তাহিয়্যাতুল মসজিদগুলো আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
জিকিরের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা
হাদিস শরিফে বর্ণিত বিভিন্ন সময় ও মুহূর্তের মাসনুন দোয়া ও জিকির, নামাজের পরে ও সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ ও জিকিরসমূহ নিয়মিত পাঠ করা। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। দোয়ার রয়েছে অনেক ফজিলত। দোয়াও একটি স্বতন্দ্র ইবাদত। মুমিনের বৈধ কোনো দোয়াই আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না।
দান-সদকার ধারা অব্যাহত রাখা
রমজানে জাকাত, সদকাতুল ফিতর এবং অন্যান্য দান-সদকার আমল শেষ হলেও সারা বছর এ আমলের দ্বার উন্মুক্ত। জাকাত ও সাধারণ দান-সদকা রমজানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গোটা বছরই এর সময় এবং তা সব সময়ই ফজিলতপূর্ণ আমল। অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী সারা বছরই দান-সদকার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা উচিত।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দান-সদকা সম্পদ কমায় না।’ সহিহ মুসলিম : ২৫৮৮
কোরআন তেলাওয়াতের ধারা অব্যাহত রাখা
কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদা-সংবলিত একটি আমল। নবী করিম সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করল, তার বিনিময়ে সে একটি নেকি লাভ করল। ওই একটি নেকি দশটি নেকির সমতুল্য গণ্য করা হবে। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।’ জামে তিরমিজি : ২৯১০
আসুন, এভাবে সারা বছরের জন্য নেক আমলের ধারা অব্যাহত রাখি, অলসতা বর্জন করি। গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।