বিনোদন ডেস্ক : ঢাকাইয়া সিনেমার নায়ক শান্ত খান। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে তার অভিনীত ‘প্রেম চোর’, ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াঁ ভাই’ নামে দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। এ ছাড়া তিনি বুবুজান ও গ্যাংস্টার নামে আরও দুই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে।
নায়ক শান্ত খান চাঁদপুরের আলোচিত বালুখেকো চেয়ারম্যান সেলিম খানের ছেলে। মাত্র তিন বছরে ২৪ জায়গায় জমি কিনেছেন তিনি। একই সময়ে বাবার কাছ থেকেও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে জমি ও ফ্ল্যাট দানসূত্রে পেয়েছেন। তার এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা দেখানো হলেও বাজারমূল্যে আরও অনেক বেশি। দুদকে শান্ত খানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।
তথ্য বলছে, শান্ত খান যেসব জমি কিনেছেন তার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। বাস্তবে এসব জমির বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া চাঁদপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বাবার কাছ থেকে দান হিসেবে যেসব জমি ও ফ্ল্যাট পেয়েছেন তার মূল্য পায় ১০ কোটি টাকার বেশি। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ৫০ কোটি টাকার জমির মালিক।
যেভাবে দুদকের নজরে শান্ত
জানা গেছে, বালুখেকো সেলিম খানের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১ আগস্ট সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার তদন্তকালে নায়ক শান্ত খানের সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুদকের নজরে আসে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকার এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদক শান্ত খানের সম্পদের হিসাব বিবরণী নেয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অনুসন্ধান কর্মকর্তা সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক, বীমা, ভ‚মি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠান। ওই চিঠি পেয়ে বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য পাঠানো হয় দুদকে।
কোথায় কত জমি শান্ত খানের
চাঁদপুর রেজিস্ট্রি ও ভূমি অফিস থেকে পাঠানো নায়ক শান্ত খানের জমি ক্রয়ের তথ্য-উপাত্ত এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। তাতে দেখা গেছে, তিনি ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে চাঁদপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের লক্ষ্মীপুর মৌজায় ২৫টি দলিলে ৪৯০ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ৬৮৭৩ দলিলে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ, ২৫ নভেম্বর ৭০১৩ নম্বর দলিলে ৪৭ শতাংশ, ৭০২২ দলিলে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ নভেম্বর ৭০৫৫ নম্বর দলিলে ৪৩ শতাংশ, ৪ ডিসেম্বর ৭২৬৭ এবং ৭২৫৮ নম্বর দলিলে ৩২ শতাংশ, ৭২৬৬ নম্বর দলিলে ১৫ শতাংশ ও ৭২৬৭ নম্বর দলিলে ৯ শতাংশ। ৫ ডিসেম্বর ৭৩০৯ নম্বর দলিলে ৩৪ শতাংশ। ১৫ ডিসেম্বর ৭৫০৩ নম্বর দলিলে ১২ শতাংশ, ৭৫০৭ নম্বর দলিলে ১২ শতাংশ এবং ১৮ ডিসেম্বর ৭৫৬০ নম্বর দলিলে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।
২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ৩২৬ নম্বর দলিলে ৮ শতাংশ, ২০ জুলাই ২৮০৫ নম্বর দলিলে ১৮ শতাংশ, ২৮০৬ নম্বর দলিলে ৫১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২৮০৭ নম্বর দলিলে ১৩ শতাংশ, ২৮০৮ নম্বর দলিলে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২৮০৯ নম্বর দলিলে ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ২৮ জুলাই ৩০১২ নম্বর দলিলে ২০ শতাংশ, ৮ জুলাই ২৪৮৯ নম্বর দলিলে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২৫১৫ নম্বর দলিলে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৮১৭ নম্বর দলিলে ৯ শতাংশ, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৩৮১ নম্বর দলিলে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ৬০৪৮ নম্বর দলিলে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।
তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪টি দলিলে এসব জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। তিনি যেসব জমি কিনেছেন তার ২০১৯ সালে কেনা জমির প্রতি শতাংশের দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১ থেকে সোয়া লাখ টাকা। আর ২০২০ সালে কেনা জমির দাম দেখানো হয়েছে শতাংশপ্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০২০ সালে কেনা সাড়ে তিন শতাংশ জমির ৬৭ লাখ ১০ হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি শতাংশের দাম দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ১৭ হাজার টাকার বেশি। সব মিলিয়ে তার জমির দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এটি দলিল মূল্য হলেও বাস্তবে বাজারমূল্য তার থেকে কয়েকগুণ বেশি।
জানা গেছে, নায়ক শান্ত তার বাবা সেলিম খানের কাছ থেকে ২০২০ ও ২০২১ সালে চারটি দলিলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এর মধ্যে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর মৌজায় ১৮৩ নম্বর দলিলে ২৯ দশশিক ৮১ শতাংশ জমিসহ বাড়ি ও ৫১৭ নম্বর দলিলে সাড়ে ১১ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ৫৫০৪ নম্বর দলিলে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূইঘরে ৪১৭ অযুতাংশ জমিসহ সাড়ে ১৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৫ম, ৭ম ও ৯ম তলার সব ফ্ল্যাট এবং রাজধানীর কাকরাইলে জমিসহ একটি ফ্ল্যাট। তিনি গেল বছর তার গ্রামের বাড়িতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন।
সেলিম খানের সম্পত্তির বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি
দুদকের তথ্য মতে, সেলিম খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের নামে ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা, টেন্ডারবাজি, নদী থেকে বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার সম্পদের বেশি অর্জনের অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এর অবৈধ সম্পদ অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ হয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। মামলার তদন্তকালে সেলিম খান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের ৮৭ স্থানে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিজমা থাকার তথ্য পায়। তার স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪১ হাজার ৩৬১ টাকা এবং অস্থাবরের মূল্য ৩ কোটি ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১০ টাকাসহ মোট ৩৩ কোটি চার লাখ ৪৬১ টাকা দেখানো হয় দলিলে। বাস্তবে এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। সেলিম খানের সম্পত্তি সরিয়ে ফেলা হতে পারে এ কারণে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। এরপর আদালত ক্রোককৃত সম্পত্তি পরিচালনার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।