বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি নতুন এক ছবিতে আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের চারপাশে সর্পিল এক চৌম্বক ক্ষেত্রের দেখা মিলেছে।
এতে দেখা যায়, ব্ল্যাক হোলটিকে ঘিরে রয়েছে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র, যা সর্পিল আকারে মোচড় কাটছে ও ব্লাক হোলটির আবর্তন করছে।
এটি ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’ নামে পরিচিত, যা মিল্কিওয়ে’র কেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল এক ব্ল্যাক হোল। নিজের কাছাকাছি যে কোনও আলো ও পদার্থকে গ্রাস করতে পারা ব্লাক হোলটির এমন রূপ আগে কখনই দেখা যায়নি।
নতুন ছবিতে ইঙ্গিত মিলেছে, ব্ল্যাক হোলটির সঙ্গে মিল আছে ‘এম৮৭’ নামের একটি ছায়াপথের কেন্দ্রের কাঠামোর। সেই ব্ল্যাক হোলটি প্রথমবার ছবিতে দেখা স্যাজিটেরিয়াস এ* এর চেয়ে আকারে এক হাজার গুণ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, উভয় কৃষ্ণগহ্বরেই শক্তিশালী ও সংগঠিত চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে।
এ ছবি গবেষণার পেছনে কাজ করা বিজ্ঞানীদের মতে, সম্ভবত এমন প্যাটার্ন সব ধরনের ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রেই প্রচলিত ঘটনা। বুধবার এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে’-এ।
“আমরা দেখেছি, ব্ল্যাক হোলগুলো কীভাবে এদের চারপাশের গ্যাস ও পদার্থের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল শক্তিশালী ও সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র,” বিবৃতিতে বলেন এ গবেষণার সহ-গবেষক ও নাসার ‘হাবল ফেলোশিপ প্রোগ্রাম’-এর আইনস্টাইন ফেলো সারা ইসাউন।
গবেষণার জন্য ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’ নামে পরিচিত একদল আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীর সঙ্গে কাজ করেন ইসাউন, যা বিশ্বের ৮০টি প্রতিষ্ঠানের তিনশ’র বেশি বিজ্ঞানী নিয়ে গঠিত।
২০২২ সালে স্যাজিটেরিয়াস এ*’র প্রথম সরাসরি চাক্ষুস প্রমাণ ধারণ করা হয়েছিল এই একই যৌথ গবেষণায়, যেখানে গবেষণা দলটি ‘এম৮৭’ নামের ছায়াপথ পরীক্ষা করেছে, যার অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ৩০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে।
ওই ছায়াপথের কেন্দ্রে বিশালাকারের ব্ল্যাক হোল ঘিরে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্রটি ‘এম৮৭*’ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, এটি ছায়াপথের নাটকীয় আচরণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্ল্যাক হোলটি প্রায় আলোর গতিতেই মহাকাশে ইলেকট্রন ও অন্যান্য উপপারমাণবিক কণার শক্তিশালী ফোয়ারা উৎক্ষেপণ করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি।
তবে, স্যাজিটেরিয়াস এ*’র মধ্যে এ ধরনের কার্যকলাপ কখনও শনাক্ত করা যায়নি। এই ছবির গবেষকদের মতে, দুটি ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন মিল থেকে ইঙ্গিত মেলে, এর মধ্যে এমন কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে, যা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্যাজিটেরিয়াস এ* ব্লাক হোলটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, যা আকারে সূর্যের চেয়ে ৪০ লাখ গুণ বড়।
ব্লাক হোলের চারপাশে বাঁকানো চৌম্বক ক্ষেত্রের নতুন এ ছবিটি প্রকাশ পেয়েছে ‘পোলারাইজড’ বা বিক্ষিপ্ত আলোর মাধ্যমে। মানুষ খালি চোখে এ ধরনের বিক্ষিপ্ত আলো ও প্রচলিত ‘স্বাভাবিক’ আলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
‘পোলারাইজড’ বলতে এমন আলোক তরঙ্গকে বোঝায়, যা একটি নির্দিষ্ট উপায়ে কম্পন সৃষ্টি করে।
আর এই শব্দের কম্পনের মাধ্যমে চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রাণবন্ত রেখার বিবরণ বাছাই ও এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নকশা তৈরির সুবিধা পেয়ে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel