জুমবাংলা ডেস্ক : বছরের প্রথম দিনটি আনন্দেই কেটেছে শিশুদের। খালি হাতে স্কুলে এসে নতুন মলাটের বই পাওয়া কতটা আনন্দের, তা শিশুদের হাসিমুখ দেখলে প্রমাণ মেলে। সারিবদ্ধভাবে স্কুলে এসে শিক্ষকদের কাছ থেকে বই নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, এই দিনের জন্য তারা বার্ষিক পরীক্ষার পর থেকেই অপেক্ষা করছিল।
অন্যদিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে। চলতি শিক্ষাবর্ষে যে চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হলো তার মধ্যে নবম শ্রেণিও রয়েছে, যে শ্রেণিতে বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার।
এর আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই অভিন্ন বিষয় পড়ত। আর নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নামে আলাদা বিভাগে পড়তে হতো। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক আর বাণিজ্য নামে পৃথক কোনো বিভাগ বিভাজন নেই। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী নতুন নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে।
বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া নিয়ে নানা মত থাকলেও সরকার সেই সব মত বিবেচনায় নেয়নি। ২০০৫ সালেও এভাবে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু হাতে গোনা দু-একজন শিক্ষাবিদের আপত্তির কারণে সরকার ঐ উদ্যোগ থেকে সরে এসেছিল।
বই উত্সব: গতকাল দেশব্যাপী আনন্দ উৎসবের মধ্যেই নতুন বই বিতরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কোথাও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আবার কোথাও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর বাইরে স্কুলগুলো নিজ উদ্যোগে উৎসবের আয়োজনে বই বিতরণ করে। কোথাও শ্রেণিকক্ষে আবার কোথাও স্কুলের মাঠে প্যান্ডেল টানিয়ে বই বিতরণ করতে দেখা গেছে।
মাধ্যমিক স্তরে বই বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় কোনো আয়োজন না থাকলেও প্রাথমিক স্তরের বই বিতরণের জন্য ছিল এমন আয়োজন। মাধ্যমিক স্তরের বই বিতরণে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে কুমিল্লার স্কুলে কেন্দ্রীয় বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে এমন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানিয়েছিল।
গতকাল সকালে প্রাথমিক স্তরের বই বিতরণের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রধান অতিথি এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন বই শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নতুন বছরের উপহার। নতুন বই শিশুকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শিশুকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। শিশুমনের এই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে বই বিতরণের সূচনা। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উত্সবে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম অনুসরণে সব ক্যাটাগরির বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন পাঠ্যবই প্রদান করে আসছে। শিশুদের মধ্যে পাঠ্যবই আকর্ষণীয় করার জন্য ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই হোয়াইট পেপার, কভার পৃষ্ঠা, হিট থার্মাল পারফেক্ট বাইন্ডিংসহ চার রঙের পাঠ্যবই মুদ্রণ করা হচ্ছে। ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরিমার্জিত কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরর পাঠ্যবই মুদ্রণ করা হচ্ছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। আর বই ছাপা হচ্ছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
গতকাল প্রাথমিকের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সব বই পায়নি। এই বইগুলো এখনো ছাপা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব বই পাবে বলে জানিয়েছেন প্রেসের মালিকেরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।