বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : কুইপার বেল্টের অবস্থান সৌরজগতের আটটি গ্রহের কক্ষপথের একেবারে শেষ প্রান্তে। সাধারণত এ কুইপার বেল্টের ওপর ভিত্তি করেই সৌরজগতের ব্যাপ্তি বা পরিসর অনুমান করা হয়।
সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, কুইপার বেল্টের আকার বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণার চেয়েও ‘অনেক বড়’।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘নিউ হরাইজনস’ মহাকাশযানটি সম্প্রতি সৌরজগতের সবচেয়ে বিখ্যাত ‘কুইপার বেল্ট অবজেক্ট (কেবিও)’র বামন গ্রহ প্লুটোকে পরিদর্শন করেছে।
পরবর্তীতে মহাকাশযানটি কুইপার বেল্টে অবস্থিত ‘অ্যারোকোথ’ নামের ছোট একটি বস্তুর পাশ দিয়ে গিয়েছে। এরপর এটি কুইপার বেল্ট বরাবর নিজের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
‘নিউ হরাইজনস’ মহাকাশযানটির ‘ভেনেশিয়া বার্নি স্টুডেন্ট ডাস্ট কাউন্টার (এসডিসি)’ নামের যন্ত্র দিয়ে কুইপার বেল্টের ধুলোর মাত্রা পরিমাপ করেছেন গবেষকরা।
যন্ত্রটির সাহায্যে কুইপার বেল্ট থেকে তুলে আনা এক ফোঁটা ধুলোয়, ধূলিকণার পরিমাণ কম পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছিল। এই ধুলাবালি মূলত আসে বিভিন্ন কুইপার বেল্ট অবজেক্ট, গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষ থেকে। সেইসঙ্গে নক্ষত্রমণ্ডলের ধূলিকণা ও বিভিন্ন কুইপার বেল্ট অবজেক্ট বিস্ফোরণ থেকেও এমনটি ঘটে থাকে।
তবে পৃথিবী থেকে এ সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণ এসেছে, সে অনুযায়ী কুইপার বেল্টটি পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্বের ৫০ গুণ (বা এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট, এইউ) পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
তবে ‘নিউ হরাইজনস’ মহাকাশযানটির অবস্থান ৫৫ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরে, যা এখনও ভালোভাবেই কাজ করছে।
গবেষণা দলটির বিশ্লেষণ বলছে, কুইপার বেল্টটি ৮০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা এর চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। এর মানে বিভিন্ন কুইপার বেল্ট অবজেক্টের ব্যাপ্তিও এর চেয়ে বেশি হতে পারে। আর এমনটা ঘটে থাকলে বিজ্ঞানীদের দাবি, কুইপার বেল্টে এমন অনেক বস্তু রয়েছে, যেগুলো এখনও অনাবিষ্কৃত।
“প্রথমবারের মতো কুইপার বেল্টে নেপচুন ও প্লুটোর কক্ষপথকে ছাড়িয়ে বিভিন্ন গ্রহের ধূলিকণা সরাসরি পরিমাপ করেছে নিউ হরাইজনস মহাকাশযানটি। তাই এ গবেষণার প্রতিটি পর্যবেক্ষণই আমাদেরকে নতুন কোনও আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যেতে পারে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো, বোল্ডার’-এর অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক অ্যালেক্স ডোনার।
“আমাদের বিশ্বাস, আমরা একটি বড় পরিসরের (বর্ধিত) কুইপার বেল্ট শনাক্ত করেছি, যেখানে সম্পূর্ণ নতুন কোনো বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে আরও বেশি ধূলিকণা তৈরি হচ্ছে। আর এর থেকে সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চলের রহস্য সমাধানেরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
গবেষণা দলটি এর বিকল্প কারণগুলোও খতিয়ে দেখছে। সম্ভবত কুইপার বেল্টের ধুলাবালি সূর্যের আলোর মাধ্যমে সৌরজগতের আরও দূরবর্তী অঞ্চলে সরে যাচ্ছে। ফলে কুইপার বেল্ট নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশিত পরিমাপও তালগোল পাকাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আইএফএল সায়েন্স।
“‘নিউ হরাইজনস’ থেকে পাওয়া নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক ফলাফলগুলো সম্ভবত প্রথমবারের মতো আমাদের সৌরজগতে কোনো মহাকাশযানের নতুন বস্তু খুঁজে পাওয়ার ঘটনা,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বোল্ডার শহরে অবস্থিত ‘সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর বিজ্ঞানী ও ‘নিউ হরাইজনস’ মহাকাশযানের প্রধান অনুসন্ধানকারী অ্যালান স্টার্ন।
“এ উন্নত কুইপার বেল্টে থাকা ধূলিকণার স্তরগুলো কতটা দূরে যায়, তা দেখতে আমার তর সইছে না।”
এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।