জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহীর সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র বানেশ্বর হাট। মৌসুমে এটি দেশের অন্যতম আম কেনাবেচা ও চালানেরও বড় মোকাম। এছাড়া কলা, সবজি থেকে শুরু করে চাষিদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রিরও বড় আঞ্চলিক কেন্দ্র। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, হাট ইজারাদারের অতিরিক্ত খাজনায় দীর্ঘদিন জর্জরিত তারা। এমনকি এ হাটে একটি মুরগি বা হাঁস বিক্রি করলে ৫০ টাকা খাজনা আদায় করা হয়। তারা জিম্মি হয়ে থাকলেও জেলা বা উপজেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এছাড়া নির্ধারিত সরকারি দরকে ইজারাদার আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় করছেন।
চলতি বাংলা ১৪৩০ বর্ষের জন্য বানেশ্বর হাটটি ২ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকায় ইজারা নেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ। গত বছর এ হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ টাকা। ১১ দশমিক ৮৫ একর আয়তনের হাটটি ইজারা দেয় পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিস। তবে প্রশাসনের নীরবতায় হাটের অর্ধেক জায়গা দখলে নিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী গোডাউনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এসব স্থাপনা ভাড়া দিয়ে তারা লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে কামাই করছেন। হাটের নির্ধারিত জায়গা বেদখল হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পণ্য নিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের ওপর বসতে হচ্ছে। এতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে।
বানেশ্বর হাটটি সপ্তাহে দুদিন বসে। প্রতি হাটবারে ৫ থেকে ৭ হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য হাটে আসেন। মনিরুল ইসলাম নামের এক কৃষক অভিযোগ করেন, এক মন সরিষা বিক্রি করলে ইজারাদারকে ৪০-৫০ টাকা খাজনা দিতে হচ্ছে। এক কাঁদি কলা বিক্রির জন্য দিতে হয় ৪০-৪৫ টাকা। কখনো ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেও আদায় করা হয় দ্বিগুণ খাজনা।
সামসুল হক নামের একজন কৃষক জানান, হাটে ভাসমান ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও রয়েছে তিন শতাধিক স্থায়ী দোকান। ইজারাদারের লোকেরা প্রতিটি দোকান থেকেও খাজনা আদায় করেন। যদিও এসব দোকান হাটের বা সরকারি বরাদ্দ দোকান নয়। জামরুল শেখ নামের আরেক কৃষক অভিযোগে বলেন, গত বছর সরকারিভাবে নির্ধারিত সর্র্বোচ্চ খাজনা ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে ১০ কেজি চাল বিক্রি করলেও নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। খাজনা আদায় নিয়ে প্রতি হাটে ইজারাদারের লোকদের সঙ্গে ঝামেলা বিবাদের ঘটনা ঘটছে। কখনো কখনো তা হামলা-পালটাহামলায় রূপ নিচ্ছে। জমসেদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, সম্প্রতি এ হাটে একটি ছোট হাঁস বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে জোর করে ৫০ টাকা খাজনা নেওয়া হয়। একটি মুরগি বিক্রি করলেও ৪০-৫০ টাকা খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
অভিযোগে জানা গেছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ভাই আজিজুল বারি মুক্তা হাটের ১৫ শতক জমি দখলে রেখে ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করছেন। এনামুল হক হাজি হাটের আরও ১৫ শতক জায়গা দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া মাড়িয়া গ্রামের শাসুল হক ৪ শতক, রহুল আমিন ৭ শতক, আনছার আলী ১০ শতক, ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মিন্টু ও তার ভাইয়েরা মিলে ৪ শতক, তাতারপুর গ্রামের লুৎফর রহমান ১০ শতক, বিহারিপাড়া গ্রামের হারুনুর রশিদ ৩ শতক, বালিয়াঘাটির মামুন ৫ শতক, রিয়াজুল কসাই ২ শতক, তিন শতাধিক দোকান ঘর, গোডাউন অবৈধভাবে নির্মাণ করে ভাড়া তুলছেন। এলাকার মানুষ হাটের সরকারি জমি উদ্ধারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে শত অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরবভূমিকা পালন করছেন।
সরকারি দরের দ্বিগুণ হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ১ কোটি টাকা বেশি দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছেন। এ কারণে খাজনার পরিমাণ বেশি হয়েছে।
বেপরোয়া খাজনা আদায় প্রসঙ্গে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।