আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুকুরের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব অতি প্রাচীন। অন্তত প্রস্তর যুগ থেকে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আনুগত্য, সাহস ও কর্মদক্ষতার মতো গুণে অন্যসব প্রাণীর তুলনায় এগিয়ে কুকুর।
বুদ্ধিমান এ প্রাণীর মধ্যে কোন প্রজাতি বেশি স্মার্ট তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কুকুর বিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক স্ট্যানলি কোরেন তাঁর ‘দ্য ইন্টেলিজেন্স অব ডগস’ নামক বইয়ে নানা প্রজাতির কুকুর নিয়ে আলোচনা করেছেন। বুদ্ধিমত্তার বিচারে কোন প্রজাতির কুকুর কতটা স্মার্ট তার একটা র্যাঙ্কিং তৈরি করেছেন তিনি।
অধ্যাপক স্ট্যানলি কোরেন বুদ্ধির বিবেচনায় ১৩১ জাতের কুকুরের তালিকা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান সাত প্রজাতির কুকুর সম্পর্কে জানা যাক—
বর্ডার কলি
অধ্যাপক স্ট্যানলির মতে, বর্ডার কলি সবচেয়ে স্মার্ট প্রজাতির কুকুর। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের বিভিন্ন পাথুরে অঞ্চলে এই কুকুরের দেখা মেলে বেশি। সাধারণ কুকুর ১৬০ থেকে ২৫০ শব্দ বুঝতে পারলেও বর্ডার কলি ১ হাজারের বেশি শব্দ মনে রাখতে পারে। শক্তিমত্তা ও কর্মদক্ষতার জন্য এ কুকুর বিখ্যাত। বর্ডার কলির গড় উচ্চতা ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চি। ওজন ৩০ থেকে ৫৫ পাউন্ড। এই প্রজাতির কুকুর ১২ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে।
পুডল
পুডল শব্দের অর্থ কোঁকড়ানো লোমযুক্ত প্রাণী। কারণে ফরাসি বংশোদ্ভুত এই কুকুরটিকে দেখতে কিছুটা আদুরে ও বোকাসোকা মনে হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তারা পুরা উল্টো। আবেগ ও শনাক্তকরণ বুদ্ধিমত্তার গুণে এটাকে বিশ্বের দ্বিতীয় স্মার্ট কুকুর বলে মনে করেন অধ্যাপক স্ট্যানলি। পুডল চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। চমৎকার এই কুকুরের উচ্চতা গড়ে ১৫ ইঞ্চির মতো। ওজন ৫০ থেকে ৭০ পাউন্ড। এরা ১০ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
জার্মান শেফার্ড
আমাদের কাছে অতিপরিচিত জার্মান শেফার্ডকে বুদ্ধিমত্তার বিচারে তৃতীয় বলে মনে করেন অধ্যাপক স্ট্যানলি। তবে যেসব কুকুর পশুপালনের জন্য বিখ্যাত সেগুলোর মধ্যে মেধার বিচারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মান শেফার্ড। নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ, কোনো কাজ শেষ করার আকাঙ্ক্ষা ও আনুগত্যের জন্য জার্মান শেফার্ডের বিশেষ সুনাম রয়েছে। এ কারণে আইন-শঙ্খলা বাহিনীকে অভিযানে অধিকাংশ সময় এ জাতের কুকুরের সহায়তা নিতে দেখা যায়। জার্মান শেফার্ডের উচ্চতা ২২ থেকে ২৬ ইঞ্চি। ওজন ৫০ থেকে ৯০ পাউন্ড। গড় আয়ুষ্কাল ৭ থেকে ১০ বছর।
গোল্ডেন রিট্রিভার
বুদ্ধির বিচারে গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর বিশ্বে চতুর্থ। বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য এই প্রজাতির কুকুর সুপরিচিত। শিকার ও হারানো জিনিস উদ্ধারের জন্য গোল্ডেন রিট্রিভারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। অত্যন্ত কর্মঠ প্রজাতির এই কুকুরের উচ্চতা সাড়ে ২১ থেকে ২৪ ইঞ্চি মতো হয়ে থাকে। ওজন ৫৫ থেকে ৭৫ পাউন্ড। বেঁচে থাকে ১০ থেকে ১২ বছর।
ডোবারম্যান পিনসার
সাহস, আনুগত্য, সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ডোবারম্যান পিনসারের কোনো জুড়ি নেই। জার্মানির এ প্রজাতির কুকুরটি যে কোনো কিছু সহজে শিখতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা ভয়ংকর মনে হলেও বাস্তবে এরা বেশ মিশুক। গতি ও শক্তির জন্য মেদহীন দেহের এ কুকুরটি বেশ জনপ্রিয়। উচ্চতায় ২৪ থেকে ২৮ ইঞ্চির পিনসারের ওজন ৬০ থেকে ১০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। বেঁচে থাকে ১০ থেকে ১২ বছর।
শেটল্যান্ড শীপডগ
শেটল্যান্ড শীপডগকে বুদ্ধিমত্তার বিচারে ষষ্ঠ স্থানে রেখেছেন অধ্যাপক স্ট্যানলি। একজন পশুপালনকারী যা কিছু করতে পারে তার প্রায় সব কিছুই করতে পারে শীপডগ। যুক্তরাষ্ট্রের শেটল্যান্ড দ্বীপের কৃষকদের কাছে এর বেশ কদর রয়েছে। শেটল্যান্ড শীপডগ যে কোনো উপায়ে মনিবকে সন্তুষ্ট করতে মরিয়া থাকে। ক্ষিপ্রতা এর বিশেষ গুণ। ১৩ থেকে ১৬ ইঞ্চি উচ্চতার শীপডগরে ওজন ১৫ থেকে ২৫ পাউন্ড হয়ে থাকে। বেঁচে থাকে ১২ থেকে ১৪ বছর।
ল্যাব্রাডর রিট্রিভার
সপ্তদশ শতকে কানাডার নিউফাউন্ড দ্বীপের বাসিন্দারা সর্বপ্রথম ল্যাব্রাডর রিট্রিভারকে পোষ মানায়। এরা সেন্ট জন ডগ নামের আরেকটা প্রজাতির কুকুরের বংশধর। বর্তমানে সেন্ট জন ডগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইংরেজদের কাছে জনপ্রিয় ল্যাব্রাডর ঘ্রাণশক্তির জন্য বিখ্যাত। আরেকটি বিশেষ গুণ হলো, চারপাশ থেকে দেখে নিজে নিজে অনেক কিছু শিখে নেয় এরা। যুক্তরাষ্ট্রেও বেশ জনপ্রিয় এই কুকুরের উচ্চতা সাড়ে ২১ থেকে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ৫৫ থেকে ৮০ পাউন্ড। গড়ে ১০ থেকে ১২ বছর বেঁচে থাকে এই প্রজাতির কুকুর।
রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে তামান্না-ই-জাহান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।