জুমবাংলা ডেস্ক : ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া শিশুটি ভালো আছে। শর্তের ভিত্তিতে শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে তার পরিবার। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নবজাতক অন্য মায়ের দুধ পান করছে। নবজাতকের বড় বোন তার নাম রেখেছে ‘ফাতেমা’। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও ঘাতক ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার ইউএনও নিহতদের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
জন্মেই অনাথ সেই শিশুর আপন বলতে বেঁচে আছে আট বছর বয়সী বোন জান্নাতুল ফেরদৌস ও পাঁচ বছরের ভাই ইবাদত। সোমবার দুপুরে জান্নাতুল জানায়, বোন হবে জেনেই নাম ‘ফাতেমা’ ঠিক করে রেখেছিল সে। তবে শিশুর দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, তারা এখনও নাম চূড়ান্ত করেননি। এছাড়া যে ক্লিনিকে তার চিকিৎসা চলছে, তার মালিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নাম প্রস্তাব করেছেন।
দত্তক নিতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারের: নবজাতককে দত্তক নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গত রোববার রাত পর্যন্ত দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে সোমবার শিশুটির দাদা আত্মীয়দের নিয়ে আলোচনায় বসেন। পরে জানান, নবজাতককে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন।
শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার দুই ছেলেই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। গত শনিবার নিহত হওয়া জাহাঙ্গীর তার দেখাশোনা করলেও তিন সন্তান রেখে তিনিও নিহত হলেন। এখন তারা অথৈ সাগরে পড়েছেন। শিশুটিকে তাদের পক্ষে লালন-পালন সম্ভব নয়। এ কারণে তারা দুইজনসহ জাহাঙ্গীরের রেখে যাওয়া আরও দুই সন্তানের ভরণপোষণের খরচ যিনি মেটাতে পারবেন, এমন লোকের হাতেই তারা শিশুটিকে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বোন জান্নাতুল জানায়, সে তার বোনকে ভালো মানুষের কাছে দিতে চায়। মা-বাবার জন্য কিছুক্ষণ পরপর জান্নাতুল কাঁদলেও শিশু ইবাদতের তা বোঝার সাধ্য নেই। সোমবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবার কবরের আশপাশ ঘুরে মোবাইলে কার্টুন দেখছে ইবাদত। তাকে এভাবেই ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে।
হাইকোর্টে রিট: ‘ফাতেমা’র জীবনযাপনের খরচ সারাজীবন রাষ্ট্র বহন করবে- এমন নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এ রিট করেন। রিটে শিশুটি এবং দুর্ঘটনায় নিহত তার বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়েছে। রিটে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
ফাতেমা ও তার দুই ভাইবোনের সহায়তার জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। সোমবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ হিসাব খোলা হয়। হিসাবের শিরোনাম- রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক ও অন্য দুই সন্তানের সহায়তার হিসাব। নম্বর- ৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখা। হিসাব পরিচালনা করবেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নবজাতকের দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু।
সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান পরিবারের খোঁজ নিতে যান। এ সময় তিনি তাদের হাতে ব্যাংক হিসাবের চেক বইসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা তুলে দেন।
মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া সেই শিশুর জন্য খোলা হলো ব্যাংক হিসাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।