জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকায় একাধিক প্লট। গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি। তিনশো ৩১ শতাংশ ফসলি জমি রয়েছে গ্রামের বিলে। সরকারি চাকরির প্রভাব খাটিয়ে অন্যের ৯ বিঘা জমিও দখল করেছেন তারা। মূলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তারা জ্ঞাতবহির্ভূত এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমন অঢেল সম্পদের মালিক বগুড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম শফি ও তার ছোট ভাই বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকত আলী। তারা গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের বামনবাড়িয়া গ্রামের মৃত মমতাজ মণ্ডলের ছেলে।
স্থানীয়রা বলেন, রফিকুল ইসলাম শফি ১৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ও শওকত আলী ২১তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। সে সময় তাদের তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গ্রামের মাঠে কৃষি জমি কেনা শুরু করেন দুই ভাই। পরিবর্তন আসে আচার ব্যবহারেও। যেকোনো কাজেই গ্রামের লোকজনের ওপর প্রভাব খাটাতেন।
দরিদ্রদের কাছ থেকে দখলে নেওয়া জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়ে ওই গ্রামের অন্তত দশজন কৃষক সোমবার (২৬ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। লিখিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি চাকুরীজীবী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রভাব খাটিয়েছেন নানা ভাবে। জোরপূর্বক দখল করেছেন কৃষি জমি। এসব কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করার অভিযোগও রয়েছে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী আফতাব হোসেন (৫৫) ও আমিরুল ইসলাম (৪২) অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের আমলে নিজের নামে বামনবাড়িয়া, বিলশা, রুহাইসহ আশপাশের কয়েকটি বিলে ৩৩১ শতাংশ জমি কিনেছেন রফিকুল ইসলাম শফি। গ্রামে বন্দকী সূত্রে ভোগদখল করছেন আরও ৪৩২ শতাংশ কৃষি জমি। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১০ থেকে ১২টি প্লটও রয়েছে। শওকত আলীর নামে ঢাকার আফতাব নগরে দুইটি প্লট ও উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামে রয়েছে দোতলা বিশিষ্ট দুটি ফ্ল্যাট।
ভুক্তভোগী ভোলা, ফজলার সরকার ও মোজাম্মেল হক বলেন, তারা ১৯৮৭ সাল থেকে বিলশা মৌজার ২১৩/১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৩৪৭৮ দাগের ২০৫ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে চাষাবাদ করছিলেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই জমির ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করা আছে। অথচ ২০১০ সালে স্থানীয় সাইফুলকে ব্যবহার করে জোরপূর্বক জমিটি দখলে নেন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা দুই ভাই শওকত ও শফি। প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর হওয়ায় এসব ঘটনায় তারা প্রতিবাদ করতে পারেননি। এখন তারা জমিটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের সহায়তা চান। বিচার চান প্রভাবশালী দুই ভাইয়ের।
হায়দার আলী বলেন, তাদের পৈত্তিক সূত্রে পাওয়া হরদমা মৌজার ১ একর জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছেন প্রভাবশালী শওকতের বড় ভাই স্থানীয় খুবজিপুর কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলাম। জমিটি এখনো তাদের হাতছাড়া। জমি উদ্ধারের পাশাপাশি শওকত, শফি ও রবিউলের বিচার চান তিনি।
স্থানীয় নাজমুল হাসান বলেন, গ্রামের সড়কটি পাকাকরণের সময় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে তাদের পৈত্তিক সম্পত্তির ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করান শওকত ও শফি। প্রতিবাদ করায় তাকে শারীরিকভাবে লঞ্ছিতও করা হয়।
জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে বক্তব্য না দিয়ে উপরন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন বগুড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম শফি। তবে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকত আলী বলেন, জ্ঞাতবহির্ভূত কোনো আয় করেননি তিনি। তার এবং তার স্ত্রীর সঞ্চয়ের টাকা থেকে সামান্য কিছু জমি কিনেছেন মাত্র। তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।