আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সমীহ বা আনুগত্য আদায়ে বিশ্বজুড়ে নানামুখী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে খুব কমই সফলতার দেখা পেয়েছেন তিনি। এই যেমন মধ্যপ্রাচ্যের কথাই যদি বলা হয়; এ অঞ্চলের দেশগুলোকে ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক দিন দিন মজবুত হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলোকে সমান হিসেবে বিবেচনা করায়, তাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক গভীর হয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা বনাম রুশ সম্পর্ক
সম্প্রতি মস্কো সফরের সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যে বৈঠকে পারস্পরিক শ্রদ্ধার পাশাপাশি পশ্চিমাদের দূরে ঠেলে একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
এ সময় পুতিন গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার পাশপাশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন। এছাড়া অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে তেহরানের যোগদান আগামী বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। তবে ইরানই কেবল একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নয়, যেটি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী দুই মিত্র। এই দেশ দুটির সঙ্গেও রাশিয়ার ভালো সম্পর্ক। অনেক দেশই ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের নিন্দা জানালেও, তা থেকে বিরত ছিল এই দেশ দুটি। তুরস্কের মতো তারাও রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।
মধ্যপ্রাচ্যে ফিকে হয়ে আসছে পশ্চিমা আধিপত্য
বৈশ্বিক ব্যবস্থায় রাশিয়ার গুরুত্ব এবং অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার অর্থ হলো তারা যে কোনো বিষয়ে একটি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ সৌদি আরবকে আরও তেল উৎপাদনে রাজি করার চেষ্টা চালালেও, দেশটি উৎপাদন আরও কমিয়ে দিয়েছে।
একজন প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্র নীতির অভিজ্ঞতাকে শক্তি হিসাবে প্রচার করলেও, তিনি মূল অঞ্চলে মার্কিন সম্পর্ককে আরও খারাপ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের পরিবর্তে কেবল মার্কিন হীনম্মন্যতা এবং অহংকারের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছেন বাইডেন।
রুশ-ইরান সম্পর্ক: পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন বার্তা?
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে বসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ইরান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তেহরান এবং মস্কোতে প্রায়ই সফর করেছেন। তবে পরিবর্তিত সময়ে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের আধিপত্য যখন ফিকে হয়ে আসছে, সেই সময়ে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের তাৎপর্য অনেক বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইব্রাহিম রাইসি এবং পুতিনের বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মতো মধ্যপ্রাচ্যসম্পর্কিত বিষয়ে সফল সহযোগিতার মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান-রাশিয়া যেভাবে সম্পর্ক মজবুত করেছে, ঠিক একই কায়দায় গাজা ইস্যুতে এক হতে পারে রাশিয়া ও ইরান। বিশেষ করে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে তেহরান ও মস্কো।
গত কয়েক বছরে ইরান এবং রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্কও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। তাই ইরান সামরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে চাইছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে আসন্ন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর একটি প্রধান বিষয় হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি ইরান থেকে রাশিয়ায় যেসব পণ্য রফতানি করার কথা এবং ইরান রাশিয়া থেকে যে পণ্য আমদানি করতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।
দুই দেশের মধ্যেই কাস্পিয়ান সাগর রয়েছে। তাই এই কাস্পিয়ান সাগর ব্যবহার করে বাণিজ্য সহজ করা এখন দুই দেশের মুখ্য বিষয়। পণ্য পরিবহনের জন্য সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথের ব্যবহার বাড়ানো দরকার বলেও মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এছাড়া আরও অনেক রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে, যা উভয় পক্ষের স্বার্থের জন্য সহায়ক। পশ্চিমাদের আগ্রাসন ঠেকাতে ইরান ও রাশিয়ার মতো সমমনা দেশগুলো রাইসি ও পুতিনের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হতে পারে বলেও মত অনেকের।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার ঘোষণা
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মস্কোর ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ওয়াশিংটন তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। বলা যায়, দুই দেশই মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞার শিকার।
এসব নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া ও ইরান। সেজন্য সম্প্রতি একটি যৌথ সমঝোতায় সই করেছে দুই দেশ। চুক্তিতে সই করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমি আব্দুল্লাহিয়ান এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
চুক্তিতে সই করার পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একতরফা পদক্ষেপের নেতিবাচক ফল মোকাবিলা এবং এর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করাই হবে এই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেসব অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেগুলোর প্রভাব এড়ানোর ক্ষেত্রে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন ল্যাভরভ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।