জুমবাংলা ডেস্ক : পিরামিডের সঙ্গে মিশরের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশটিতে বিশাল আকৃতির বিখ্যাত সব পিরামিডের অবস্থান। মেক্সিকো, গ্রিস ও সুদানের মতো দেশেও রয়েছে ছোটবড় কিছু পিরামিড। এতদিন ধারণা করা হতো, মিশরে বিশ্বের প্রথম পিরামিড তৈরি হয়েছে। তবে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক বলছেন, সবচেয়ে পুরনো পিরামিডটি রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। অবশ্য কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ‘আর্কিওলজিক্যাল প্রসপেকশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে ইন্দোনেশিয়ায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা একটি কাঠামোকে বিশ্বের প্রাচীন পিরামিড বলে দাবি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বান্দুংয়ের ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সির (বিআরআইএন) দীর্ঘ গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়।
গত ২০ অক্টোবর প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে সায়েন্টিফিক আমেরিকা জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার প্রাগৈতিহাসিক স্থান ‘গুনুং পাডাং’-এর নীচে অবস্থিত পিরামিডটি খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ হাজার বছর আগে নির্মিত। এই ধরনের স্থাপত্যকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন ‘পান্ডেন বেরুনডাক’। অর্থাৎ ধাপে ধাপে ওঠা পিরামিড।
এই তথ্য সঠিক হলে এটি মিশরের প্রথম বিশাল পিরামিড ৪ হাজার ৬০০ বছর বয়সী ‘জোসারের’ (ফারাও রাজা জোসারের পিরামিড) চেয়েও অনেক বেশি পুরোনো পিরামিডের মর্যাদা পাবে। এর অর্থ হলো এটি তুরস্কের প্রাচীনতম মেগালিথিক সাইট ‘গোবেকলি টেপে’-এর চেয়েও পুরনো, যা প্রায় ১১ হাজার বছর আগে নির্মিত। একইসঙ্গে এই অঞ্চলে মানব সভ্যতা সম্পর্কে যা জানা যায়, তা সম্পূর্ণরূপে পুনর্লিখন করতে হবে।
গবেষণাপত্রটির সহ–লেখক বিআরআইএনের ভূতাত্ত্বিক ড্যানি হিলম্যান নাটাউইদজাজা বলেন, ‘[গুনুং পাডাং] পিরামিডটি উন্নত সভ্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। পিরামিড তৈরি করা সহজ নয়। এর জন্য উচ্চ রাজমিস্ত্রি দক্ষতা প্রয়োজন।’
একটি বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরির উপরে স্থাপিত গুনুং পাডাংয়ে পাঁচটি ধাপ বিশিষ্ট পাথরের সোপান রয়েছে, যেখানে দেয়াল ও সিঁড়ি সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের এর মধ্যে, নাটাউইদজাজা ও তাঁর সহকর্মীরা টেরেসের নীচে কী রয়েছে তা নির্ধারণ করতে বেশ কয়েকটি স্থল-অনুপ্রবেশকারী কৌশল ব্যবহার করে সাইটটি তদন্ত করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, ভূপদার্থবিদদের ওই দলটিই প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণ করে পিরামিডটির প্রাচীনত্ব নিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
বিআরআইএনের আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক লুৎফি ইয়ন্ড্রি বলেন, ‘পিরামিডটি নির্মিত হওয়ার অনেক পরে, এই অঞ্চলের লোকেরা ১২ হাজার থেকে ৬ হাজার বছর আগে গুহাগুলোয় বসবাস করত এবং এই সময়ের কোনো খনন থেকে অত্যাধুনিক গুহাগুলোর খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, খ্রিষ্টের জন্মের হাজার হাজার বছর আগে ওই মৃত আগ্নেয়গিরির মাথায় পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল। পিরামিডের ভেতরে রয়েছে বৃহদাকার গুপ্ত কক্ষ। স্থানীয় ভাষায় গুনুং পাডাং-এর অর্থ ‘জ্ঞানের পাহাড়’। কোনও এক প্রাচীন মানব সভ্যতা আগ্নেয়পাথরের তৈরি পাহাড়ের গা কেটে এই স্থাপত্য তৈরি করেছিল– এমনটাই মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
ভূতত্ত্ববিদ ড্যানি হিলম্যান নাটাউইদজাজার ভাষ্য, গুনুং পাডাংয়ের গঠন বেশ জটিল। এর সবচেয়ে গভীর অংশ মাটির ৩০ মিটার নিচে। পিরামিডের কেন্দ্রস্থলটি খ্রিষ্টপূর্ব ২৫ হাজার থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ হাজার বছরের মধ্যে তৈরি বলে দাবি তাঁর। তারপর দীর্ঘদিন সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ফের খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৬১০০ বছরের মধ্যে এর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলে। খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ বছর আগে শেষ হয় পিরামিডের কাজ।
তবে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক ফ্লিন্ট ডিবল বলেছেন, ‘[গবেষণাপত্রটি] যেমনটি প্রকাশ করেছে, আমি অবাক হয়েছি। যদিও গবেষণাপত্রটি ‘‘বৈধ তথ্য’’ উপস্থাপন করেছে, তবে প্রত্নস্থলের বয়স সম্পর্কে সিদ্ধান্তগুলো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়।’
অনুবাদ: সোহরাব আলম, সায়েন্টিফিক আমেরিকা অবলম্বনে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।