জুমবাংলা ডেস্ক : রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে নিজেকে সপে দেন। সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থেকে রহমত অনুসন্ধান করেন বিশ্বের মুসলিমরা।
বিশেষ এই মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামি নিদর্শন ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে বিশেষ আয়োজন। এই আয়োজনে মধ্যযুগেরও আগে থেকে বর্তমান বাংলাদেশ নামে এই স্বাধীন ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদের তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
আজকের আয়োজনে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) মসজিদের তথ্য তুলে ধরা হলো।
১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ কর্ণফুলী পেপার মিলের দায়িত্ব নেয়ার পর নামাজ আদায়ের জন্য রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের মিল এলাকায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মাণ করে। ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর মসজিদটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পিলারবিহীন। চারটি দেয়ালের ওপর নির্মিত ১৩ হাজার বর্গফুটের এই মসজিদে একসঙ্গে ৪ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
কেপিএম মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে মুসলিম ঐহিত্যের নিদর্শন। তবে কোনো পিলার ব্যবহার না হওয়ার কারণে মসজিদটি সবার কাছে আকর্ষণীয়।
মসজিদটির তিন পাশে রয়েছে ২৩টি জানালা। বারান্দাসহ ১৭টি কাতারে বসতে পারেন মুসল্লিরা। প্রতিটি কাতারে অনায়াসে নামাজ আদায় করতে পারেন দুইজনের বেশি। মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে রয়েছে প্রবেশপথ। সচরাচর ভবন নির্মাণে সমান ছাদ ব্যবহার করা হলেও এটি নির্মাণে বিম থেকে আড়াআড়িভাবে ঢেউটিন আকৃতিতে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ধারণা করা হয় এই কারণে ছাদের চাপ কমে যাওয়ায় পিলারের প্রয়োজন পড়েনি। যা প্রকৌশলবিদ্যার নিপুণ কৌশল।
সাধারণত বড় মসজিদের মাঝখানে পিলার থাকার কারণে মুসল্লিদের কেউ কেউ সরাসরি ইমাম দেখতে পায় না। তবে এই মসজিদের মুসল্লিরা যে যেখানেই থাকুন না কেন, সবাই ইমামকে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই দেখতে পারেন। এছাড়া নির্মাণ কৌশলের কারণে যতই গরম পড়ুক না কেন, মসজিদে ঢুকলেই পুরো শরীর শীতল হয়ে যায়।
মসজিদের এমন নির্মাণ শৈলীতে মুগ্ধ মুসল্লিরা। তাই আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মানুষ নামাজ আদায় করতে আসেন এই মসজিদে।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা সাকিব হোসেন বলেন, ‘এই মসজিদের কথা অনেক শুনেছি। আজ নামাজ পড়তে আসলাম। ভাবতেই পারছি না আজ থেকে ৫৭ বছর আগের প্রকৌশলীরা কীভাবে এটা তৈরি করলেন! আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. লাভলু হাসান বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করি। এই মসজিদটি তুরষ্কের একটি মসজিদের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারবিহীন এমন বিশাল মসজিদ বাংলাদেশে দ্বিতীয়টা নেই। ঐতিহাসিক এই মসজিদকে হ্যারিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে সরকারি তত্ত্বাবধানে নেয়ার দাবি জানান তিনি।
কালের বির্বতনে কেপিএমও হারিয়েছে তার জৌলুস। মসজিদটিরও হচ্ছে না সঠিক দেখভাল। বৃষ্টির পানি ঢুকে কোথাও কোথাও ঝরে পড়েছে সিলিং। বয়সের ভার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে মসজিদটি।
পাশের জেলা চট্টগ্রামের রাউজান থেকে নামাজ আদায় করতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঐতিহাসিক মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে ভালো লাগেছে। খুব সুন্দর মসজিদ, তবে এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি এমন করুণ অবস্থা দেখবো কল্পনাতেও ছিলোনা। সিলিং ভাঙা, ওপরে তাকালেই বোঝা যায় ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। বয়সের ভারে ফ্যানগুলোর অবস্থাও খারাপ। এখনই এর সঠিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
মসজিদটি সংস্কার ও সরকারি তত্ত্বাবধানে নেয়ার দাবি জানান ইমাম ও পরিচালনা কমিটি।
কেপিএম জামে মসজিদের পেশ ইমাম মো. এটিএম আব্দুল্লাহ বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে এখানে ইমামতি করি। এর আগের চাকচিক্যের কথা মনে পড়লে কষ্ট লাগে। এখন মসজিদে নামাজ আদায় করতে মুসল্লিদের কষ্ট হয়। বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি পড়ে। কিছুদিন আগে নামাজ পড়া অবস্থায় সিলিং ধসে এক নামাজি আহত হন। এসব কারণে দিন দিন মসজিদে মুসল্লি কমে যাচ্ছে। সরকারের কাছে মসজিদটির সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
কেপিএম মসজিদ পরিচালনা কমিটি সদস্য মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সরকার সারা দেশে মডেল মসজিদ তৈরি করছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার রক্ষাণাবেক্ষণ করছে। আমাদের মসজিদটির দায়িত্ব সরকারের হাতে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হলে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মসজিদটি হারিয়ে যাবে। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।