ফিলিস্তিনের যে স্থানে ইবাদত করতেন জাকারিয়া (আ.)

Palestine

ধর্ম ডেস্ক : পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলদের অন্যতম জাকারিয়া (আ.)। কোরআনের একাধিক স্থানে তাঁর বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ তাঁকে নেককার ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন—ইরশাদ হয়েছে, ‘আর জাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলিয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। তারা সবাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৮৫)

Palestine

অন্য আয়াতে জাকারিয়া (আ.)-কে মারিয়াম (আ.)-এর অভিভাবক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে (মারিয়াম) ভালোরূপে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন-পালন করলেন এবং তিনি তাকে জাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন। যখনই জাকারিয়া কক্ষে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেত তখনই তার কাছে খাদ্যসামগ্রী দেখতে পেত।

সে বলত, হে মারিয়াম! এসব তুমি কোথা থেকে পেলে? সে বলত, তা আল্লাহর নিকট থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিজিক দান করেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৭)

ঐতিহাসিকরা বলেন, জাকারিয়া (আ.) ছিলেন ফিলিস্তিনের অধিবাসী এবং তিনি মসজিদুল আকসায় ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তাঁর পরিবার ছিল মসজিদুল আকসার সেবায় নিবেদিত।

তাঁরা মসজিদুল আকসার তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন। মসজিদুল আকসায় এখনো জাকারিয়া (আ.)-এর ইবাদত করার স্থানটি চিহ্নিত করা আছে। যাকে মিহরাবে জাকারিয়া বা মুসল্লায়ে জাকারিয়া বলা হয়।

ঐতিহাসিকরা বলেন, জাকারিয়া (আ.)-কে তাঁর মুসল্লা বা মিহরাবে ইবাদতরত অবস্থায় শহীদ করা হয়েছিল। বনি ইসরাঈলের লোকেরা তাঁকে হত্যা করেছিল বলে জানা যায়।

পবিত্র কোরআনেও মিহরাবে জাকারিয়ার বর্ণনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানেই জাকারিয়া তার প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার কাছ থেকে সৎ বংশধর দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। যখন জাকারিয়া মিহরাবে নামাজে দাঁড়িয়েছিল তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮-৩৯)

ধারণা করা হয়, দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হওয়ার ফলে জাকারিয়া (আ.)-এর মিহরাবের কয়েকবার স্থান বদল হয়েছে। বর্তমানে এটি আল-আকসা কমপ্লেক্সে ৪০ শহীদের মসজিদের দক্ষিণ দেয়ালে অবস্থিত, যা মূলত ওমরি বা কিবলি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। ক্রুসেড যুদ্ধের সময় আল-আকসা প্রাঙ্গণের এই স্থানে ৪০ জন মুসলিমকে শহীদ করা হয়েছিল। পরে তাঁদের স্মরণে এখানে একটি প্রার্থনাকক্ষ তৈরি করা হয়।

ক্রুসেডাররা ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম দখল করে। তারা মসজিদে আকসাকে ভবন (সামরিক ও আবাসিক) হিসেবে এবং ডোম অব দ্য রককে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করত। তখন খ্রিস্টানরা মিহরাবে জাকারিয়াকে ‘চ্যাপেল’ বা বিশেষ প্রার্থনাকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করত। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডারদের হাত থেকে জেরুজালেমকে উদ্ধার করেন সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)।

আবার কোনো গবেষকের ধারণা, মিহরাবে জাকারিয়া আল-আকসা প্রাঙ্গণের পূর্ব দেয়াল কাছে এবং পূর্ব প্রবেশপথের বিপরীতে অবস্থিত। যে দুটি স্থানকে মিহরাবে জাকারিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তার একটিতে ‘মিহরাবে জাকারিয়া’ লেখা শিলালিপি আছে এবং অন্যটিতে মামলুক রীতিতে সুরা মারিয়ামের একটি আয়াত লেখা আছে।

তথ্যঋণ : মাদায়েন প্রজেক্ট, উর্দু পয়েন্ট ডটকম ও ইসলামিক ল্যান্ডমার্কস ডটকম