জুমবাংলা ডেস্ক : স্বপ্ন ছিল প্রকৌশল কোনো বিষয়ে পড়াশোনার। কিন্তু পরিবারের অভাবের কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা থেমে যায় আলমগীর ইসলামের। এরপরও দমে যাননি তিনি। নিজের সৃজনশীল চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন আলমগীর। ইতিমধ্যে তিনি ছোট আকারের একটি বিমান তৈরি করেছেন। তাঁর তৈরি বিমান প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় আধঘণ্টা ধরে উড়তে পারে। এই উদ্ভাবন দেখতে প্রতিদিন আলমগীরের বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ।
আলমগীর দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত ভান্ডারদাহ গ্রামের আব্দুল মজিদ ও জাহানারা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে। ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে থেমে যায় তাঁর পড়াশোনা। বাড়ির কাজ করা ছাড়াও চুক্তি ভিত্তিতে শ্যালোমেশিন দিয়ে খেতে পানি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট এই যুবক প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরির কাজে সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন। অনলাইন ও ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে সময়ের সঙ্গে তাঁর এই উদ্ভাবনী কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার ভান্ডারদাহ গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় খেলার মাঠে ছোট বিমান ওড়াচ্ছেন আলমগীর। এই বিমান উড়ানো দেখতে উৎসুক মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাঁর তৈরি বিমান প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় আধঘণ্টা ধরে উড়ে।
প্রায় তিন-চার বছর ধরে বিভিন্ন মডেলের বিমান তৈরি করে উড়ানোর চেষ্টা করেছেন আলমগীর। এতে সফল হয়েছেন গত বছর। আগে অনেক বিমান তৈরি করে ভেঙেছেন আবার নতুন করে তৈরি করেছেন বলে জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ তৈরি করেছি ছেচনা মডেলের একটি বিমান। এটি গত ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে তৈরির কাজ করে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে শেষ হয়। এরপরে বাড়ির পাশে খেলার মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে বিমানটি উড়াই।’
প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি ছোট বিমানের মূল বডি কর্কশিট দিয়ে তৈরি করেছেন আলমগীর। এ ছাড়া ট্রান্সমিটার, রিসিভার, ব্যাটারি, শক্তির জন্য ব্রাশ লেস মোটর ও ছোট ফ্যান ও চাকা রয়েছে। একটি রিমোট ব্যবহার করে বিমানটি আকাশে উড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানান আলমগীর।
আলমগীর ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বিমান তৈরির, সেটি আজ পূরণ হয়েছে। তবে আমার একটি ল্যাপটপ ও আর্থিকভাবে সক্ষমতা থাকলে এই ছোট বিমানটি আরও উন্নত করা যেত। সেই সঙ্গে সহায়তা পেলে আমার শৈশবের এই স্বপ্ন পূরণের ধাপ আরও এগিয়ে যেত।’
কথা হলে আলমগীরের মা-বাবা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সে বিভিন্ন যন্ত্র তৈরির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁর উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে এসব তৈরি করে। এখন বিমান তৈরি করায় এলাকার সবাই দেখতে আসতেছে। সংশ্লিষ্টদের যদি সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমাদের ছেলের স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হবে।’
ভান্ডারদাহ গ্রামের বাসিন্দা সামসুল ইসলাম বলেন, ‘আলমগীরের এই কাজে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অসচ্ছলতার কারণে সে প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। তাই সবার সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’
উদ্ভাবনী এই কাজের প্রশংসা করে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, ‘এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রম স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় একটা উদাহরণ। এই প্রযুক্তি বিকাশে প্রশাসন তাঁর পাশে থাকবে।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।