বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এরোপ্লেনে ব্যবহারের জন্য নতুন এক ধরনের জীবাশ্মমুক্ত জ্বালানি বানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি স্টার্টআপ কোম্পানি। আর এটি তৈরি হয় মানব বর্জ্য থেকে।
এ জ্বালানি বানাতে ‘ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছে ‘ফায়ারফ্লাই গ্রিন ফুয়েলস’ নামের কোম্পানিটি। বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ যৌথ উদ্যোগে কোম্পানির লক্ষ্য ছিল, এরোপ্লেনে প্রচলিত জ্বালানির তুলনায় এতে যেন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৯০ শতাংশ কমে আসে, তা নিশ্চিত করা।
স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফায়ারফ্লাই গ্রিন ফুয়েলস যা বানিয়েছে, তার মান ‘স্ট্যান্ডার্ড এ১’ বিমান জ্বালানির কাছাকাছি।
২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের পরিবহন বিভাগ থেকে ২৫ লাখ ডলারের বেশি আর্থিক অনুদান পেয়েছে কোম্পানিটি। এখনও বাণিজ্যিক পর্যায়ে না এলেও কোম্পানি বলছে, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানিটি আনার প্রস্তুতি চলছে ও পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের প্রথম বাণিজ্যিক কারখানা পুরোদমে চালু হবে।
এ ছাড়া, এয়ারলাইন কোম্পানি ‘উইজ এয়ার’-এর সঙ্গে এরইমধ্যে চুক্তি করেছে ফায়ারফ্লাই। ২০২৮ সাল নাগাদ তাদের এরোপ্লেনে নতুন উদ্ভাবিত এই জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েছে কোম্পানি দুটি।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পানি শোধনাগার থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকে কোম্পানিটি, যেগুলো ‘হাইড্রোথার্মাল লিকুইফ্যাকশন’ নামে পরিচিত এক প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত হয়ে থাকে। পরবর্তীতে, সেই তরল বর্জ্যকে কাদা বা অপরিশোধিত তেলে রূপান্তর করা হয়। আর এ প্রক্রিয়ায় পাওয়া কঠিন অবশিষ্টাংশকে জৈব সারেও রূপান্তর করা সম্ভব।
কোম্পানির দাবি, এ প্রক্রিয়ায় জ্বালানি বানাতে প্রয়োজনীয় কার্বনের মাত্রা প্রতি মেগাজুলে সাত দশমিক ৯৭ গ্রাম কার্বন ডাইঅক্সাইড। যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা আইসিসিটি বলছে, সে তুলনায় প্রচলিত জেট ফিউয়েলে প্রতি মেগাজুল শক্তির পেছনে লাগে ৮৫ থেকে ৯৫ গ্রাম কার্বন।
কোম্পানিটি আরও বলছে, প্রচলিত প্রক্রিয়ায় গাড়ি ও প্লেনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি বানাতে প্রকৃতির লাখ লাখ বছর লেগে যায়। তবে, ফায়ারফ্লাইয়ের এ প্রক্রিয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব।
এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মানব বর্জ্য উপাদান হিসেবে সহজলভ্য। তবে, এ জ্বালানির দাম প্রচলিত বিমান জ্বালানির চেয়ে কম বা বেশি হবে কি না, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা আছে।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানির মন্তব্য জানতে প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।
তবে, এক বিবৃতিতে কোম্পানির সিইও জেমস হাইগেট বলেছেন, মানব বর্জ্য ‘সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি এটি এমন এক কাঁচামাল, যা কখনওই ফুরোবে না’।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিবিদ ও নিয়ন্ত্রকদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে আকাশপথে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শুন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা।
এদিকে, গাড়ি শিল্পে বিদ্যুচ্চালিত যান প্রবেশ করলেও ব্যাটারিচালিত উড়োজাহাজ বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে এখনও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। এর আগ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরির বিষয়টি ইতিবাচক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।