জুমবাংলা ডেস্ক : অতি ভারী বৃষ্টিতে রাজশাহীতে কয়েকশ পুকুরের চাষ করা মাছ ভেসে গেছে। বিলের ভেতর খনন করা এসব পুকুরের ওপর দিয়ে এখনও বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভেসে যাওয়া মাছ ধরতে বিলে বিলে রীতিমতো উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। হৈ-হুল্লোড় করে সবাই মাছ ধরছেন। তবে যাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, তাদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ।
এদিকে পুকুরের মাছ রক্ষা করতে গিয়ে মোকসেদ আলী (৫৫) নামে একজন জেলে স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছেন। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর কমলাপুর বিলে বৃষ্টির সময় পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া আটকাতে গিয়ে পানির তোড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। শনিবার সকালে এই বিল থেকেই তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বাড়ি জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কমলাপুর বিলে মোয়াজ্জেম হোসেন নামের এক মাছচাষির একটি পুকুরের মাছ ধরে অন্য পুকুরে ছাড়ার সময় পানির তোড়ে এই জেলে নিখোঁজ হন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
পুকুর মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তার ১২০ বিঘা আয়তনের পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা।
কমলাপুর এলাকায় রাস্তার একপাশে বিল পাতিকোলা, অন্যপাশে কমলাপুর বিল। শনিবার সকালে বিল পাতিকোলায় গিয়ে একটি পুকুরও চোখে পড়েনি। সবই ছিল পানির নিচে। পুকুরের পাড়ে লাগানো কলাগাছ দেখে শুধু পুকুরগুলোর অবস্থান বোঝা গেছে। বিল পাতিকোলার পূর্বে কমলাপুর বিলে দেখা গেছে মানুষের মাছ ধরার উৎসব। কয়েকশ মানুষ নানারকম জাল দিয়ে ওই বিলে ভেসে যাওয়া মাছ ধরছিলেন। কেউ পাচ্ছিলেন রুই, কেউ কাতলা, কেউ মৃগেল কিংবা সিলভার কার্প। জাল ফেললেই উঠে আসছিল বড় বড় সব মাছ।
গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকা থেকে বিলে মাছ ধরতে এসেছিলেন মো. ইস্রাফিল। তিনি জানান, তিনি ট্রাকের চালক। কমলাপুর গ্রামে তার ফুফুর বাড়ি। তাকে ফোন করে জানানো হয় যে, বিলের সব পুকুর ভেসে গেছে। এখন জাল ফেললেই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তাই আরও পাঁচজনকে সঙ্গে করে তিনি বিলে মাছ ধরতে এসেছেন। তোড়া জাল দিয়েই প্রত্যেকে ১০ থেকে ১২ কেজি করে মাছ পেয়েছেন।
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রায়হান হোসেনকেও দেখা গেল মাছ ধরতে। তিনি জানান, তার বাড়ি পাশের তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা এলাকায়। আগের দিন তার চাচারা এই বিল থেকে প্রচুর মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। তাই দেখে তিনিও পরদিন সকালে তার ভাইকে সঙ্গে করে মাছ ধরতে এসেছেন।
বিলে যখন মানুষ মাছ ধরার উৎসব করছিলেন তখন পাড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়। জমি ইজারা নিয়ে তিনি এই বিলে পুকুর কেটে মাছচাষ করতেন। তার প্রায় ৭০ বিঘা আয়তনের দুটি পুকুর ভেসে গেছে। এতে তার অন্তত ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গোদাগাড়ীর বিল পাতিকোলা ও কমলাপুর বিলের মতো জেলার তানোর, দুর্গাপুর, পবা, পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলার অনেক বিল তলিয়ে গেছে। ফলে বিলের ভেতর থাকা পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মাছ ধরে বাজারেও তুলেছেন। বাজারে মাছের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও এই মাছ ধরে অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তবে যাদের মাছ ভেসে গেছে তাদের চোখেমুখে এখন শুধু দুশ্চিন্তা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে সব উপজেলায় কথা বলে জেনেছি প্রায় ৫০০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও বলা যাচ্ছে না। পূর্ণাঙ্গ হিসাব পেলে তা রোববার বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মাছচাষিরা কোন ক্ষতিপূরণ পান না। তারপরেও ক্ষতির পরিমাণ একটু বাড়িয়ে বলেন। বৃষ্টিতে কিছু মাছ চাষির ক্ষতি হলেও অনেকের উপকার হয়েছে। উঁচু পাড়ের পুকুরগুলো নতুন পানিতে ভরেছে। নতুন পানিতে দ্রুত মাছ বেড়ে উঠবে।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। এই সময়ের মধ্যে ২৪৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গত ১১ বছরের মধ্যে ২০ ঘণ্টায় এত বৃষ্টি আর হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।