মাওলানা নোমান বিল্লাহ : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তাকে দেখার জন্য সাহাবিরা সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে আসতেন। কেউ কেউ সর্বদা তার দরবারে পড়ে থাকতেন। আড়াল হতে চাইতেন না এক মুহূর্তের জন্যও।
একজন মুসলমান মানেই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসেন। তাকে ভালোবেসে তাকে সর্বদা সব কাজে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। যত ভালোবাসেন ততই তাকে দেখার ইচ্ছা জাগে। তার সহবত পাওয়ার আগ্রহ জাগে।
এ জন্য প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান হজ ও ওমরায় যান। কাবার সামনে যাওয়ার যতটা ইচ্ছা পোষণ করেন ততটাই নবীজির রওজা জিয়ারতের ইচ্ছা পোষণ করেন। হয়ত দেখা পাওয়া যাবে না কিন্তু যেখানে তিনি শুয়ে আছেন তার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানাতে চান সবাই।
ঠিক একই জায়গা থেকে যারা রওজা যেতে পারেন না তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা পেতে চান। হোক না সেটা স্বপ্নযোগে। তারা কীভাবে স্বপ্নে দেখবেন?
নবীজিকে স্বপ্নে দেখবেন যেভাবে
স্বপ্ন মানুষ তিন কারণে দেখে থাকেন। ১. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। ২. অবচেতন মন থেকে। ৩. শয়তান থেকে। কেউ যদি নবীজি (সা.)-কে দেখে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হবে।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল।’ (বুখারি ১১০)
আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায়, তিনি বলেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল। আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ (মুসলিম ২২৬৬)
এর মানে হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কেউ নবীজি (সা.)-কে দেখতে পারবে না। এজন্য নবীজির দেখা পেতে চাইলে শুধু একটি কাজ করলেই হবে। তা হলো নবীজিকে ভালোবাসতে হবে।
যে নবীজিকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসবেন। আর নবীজিকে ভালোবাসার মাধ্যম হলো সব কাজে তাকে অনুসরণ করা। যেকোনো কাজ সুন্নাহ সম্মতভাবে করার সময় এই নিয়ত করা, হে আল্লাহ, আমি আপনার হাবিবকে ভালোবাসি তাই তার মতই সব কাজ করার চেষ্টা করছি।
কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখতে হলে কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন: বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহ পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা।
তবে সবার আগে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হলো ফরজ ইবাদত হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তবে নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে। এছাড়াও রসুল (সা.)-কে স্বপ্নে দেখতে হলে তার প্রতি অন্তরে অধিক ভালোবাসা থাকতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সুন্নতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বেশি পরিমাণে দরুদ পাঠ করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত ২/২৩৪)
নবীজি (সা.) দেখতে যেমন ছিলেন
এখন আমাদের জানা দরকার, নবীজি (সা.) কেমন ছিলেন। কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে। শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবীজি (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—
তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা। ঘন দাড়ি। মুখগহ্বর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত।
বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন।
ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাঁথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। যে দেখত সে একথা বলতে বাধ্য হত, ‘জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.