জুমবাংলা ডেস্ক : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় রমরমা কিডনি-বাণিজ্য। বয়স অনুযায়ী কিডনির প্রাথমিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে। ২০ থেকে ২৬ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের প্রতিটি কিডনির দাম ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। মধ্যবয়সীদের কিডনির দাম কম। তাদেরকে প্রতিটি কিডনির জন্য দেওয়া হয় ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলার দুই শতাধিক মানুষ তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। অধিকাংশ বিক্রেতা জানিয়েছেন, তারা অভাবের কারণে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
গুরুদাসপুরের এই কিডনি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় ঢাকা থেকে। অভিযোগ আছে, এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার মোনায়েম হোসেন জেমস। তার হয়ে গুরুদাসপুরে কিডনি সংগ্রহ করেন আব্বাস ও রশিদ। তারা দরিদ্রদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বেচতে উদ্বুদ্ধ করেন।
এদিকে, কিডনি-বাণিজ্য নিয়ে কোনো তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। নাটোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত কিডনি বেচাকেনার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
কিডনি কেনা-বেচার সত্যতা স্বীকার করেছেন চক্রের সদস্য গুরুদাসপুর উপজেলার আব্বাসের মোড় এলাকার রশিদ। তিনি জানান, জেমসের নেতৃত্বে কিডনি সিন্ডিকেট চলছে। তিনি ঢাকায় থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের টার্গেট করে কিডনি কেনার লোক ঠিক করা হয়। এরপর দরিদ্র মানুষদের টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি কেনা হয়। বাজারে তরুণদের কিডনির চাহিদা বেশি।
চক্রের আরেক সদস্য আব্বাস ওরফে কিডনি আব্বাস বলেন, ‘আমি নিজের কিডনি বিক্রি করেছি। এজন্য অনেকেই আমার কাছে কিডনি বিক্রির বিষয়ে পরামর্শ চাইতে আসেন। কেউ আসলে পরামর্শ দেই। তবে, আমি চক্রের সঙ্গে জড়িত না। জেমস ও রশিদ আমার বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। এরা দুজনই মূল হোতা।’
সম্প্রতি কিডনি বিক্রির জন্য রশিদের কাছে যান গুরুদাসপুর উপজেলার সাহাপুরের নজরুল ও তার মা। নজরুলের মা বলেছেন, ‘দেনার কারণে নজরুলের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এজন্য রশিদের সাথে যোগাযোগ করি। রশিদ জানায়, ক্রেতা পাওয়া গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় কিডনি কিনবে। ঢাকাতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। বিক্রির কাজে কিডনি আব্বাস ও জেমস তাদের সহযোগিতা করবে।’
চাচকৈড় বাজারের সংলগ্ন মধ্যম পাড়া এলাকার খৈবারসহ কয়েকজন বিক্রেতা জানান, তারা জেমস, রশিদ ও আব্বাসের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। তাদেরকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অভাবের কারণেই তারা কিডনি বিক্রি করেছেন।
কিডনি বিক্রি করতে গিয়েও ফিরে এসেছেন একই এলাকার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কিডনি আব্বাস ও জেমসের প্রলোভনে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলাম। পরে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি।’
চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত মোনায়েম হোসেন জেমস তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলে জানা গেছে। তিনি কিডনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি ঢাকায় নিয়মিত হাসপাতালে যাই এলাকার রোগীদের দেখাশুনা করতে। তবে, কিডনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই।’
মোনায়েম হোসেন জেমসের ব্যাংক হিসাবে অনেক টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘কিডনি সিন্ডিকেটের সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।