বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : দেশে প্রাইভেট কার বিক্রিতে বলা চলে ধ্বস নেমেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিভিন্ন মডেলের প্রাইভেট কার বিক্রি কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। সিডান ও স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) দুই ধরনের গাড়ি বিক্রিই কমেছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা বিআরটিএ সূত্র এবং গাড়ি ব্যবসায়ীদের সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের বাজারে গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির বাজারে এমন ধ্বস বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা অবশ্য এজন্য ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিটি গাড়ির দাম বেড়েছে আগের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। গাড়ি কেনার পর বিআরটিএ অবশ্যই নিবন্ধন করতে হয়। সারা দেশে বিআরটিএ নিবন্ধন নেওয়া গাড়ির হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিভিন্ন মডেলের প্রাইভেট কার বিক্রি কমেছে ৮ হাজার ৩৭৭টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালে মোট প্রাইভেট বিক্রি হয়েছে ১৮ হাজার ৫৪০টি। এর মধ্যে সিডান মডেলের ১০ হাজার ৭৮৪টি আর এসইউভি মডেলের ৭ হাজার ৭৫৬টি।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মোট গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ২৬ হাজার ৯৩৫টি। এর মধ্যে সিডান ১৬ হাজার ৬৯৫টি এবং এসইউভি ১০ হাজার ২৪০টি। দুই ধরণের গাড়ি বিক্রিতেই এবার ধ্বস নেমেছে। জানতে চাইলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশক সমিতির (বারভিডা) নেতা হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের এই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে ডলারের বিনিময় হারের কারণে ঠিকমতো গাড়ি আমদানি করা যায়নি। প্রতিনিয়ত ডলারের সঙ্গে টাকার যে অবমূল্যায়ন হচ্ছে সেটি একটা আতঙ্কের ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে গাড়ির আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে।’ তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সাল ছিল নির্বাচনের বছর। ভোট নিয়ে কি হবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এ কারণে গাড়ি বিক্রি গত বছরের আগষ্টের পর থেকেই কমে গিয়েছিল। তা ছাড়া ডলার সংকট তো আছেই।
এখন খোলা বাজার থেকে ১২৩ থেকে ১২৫ টাকায় এক ডলার কিনতে হচ্ছে। এ কারণেই গাড়ি ভেদে দাম ২ থেকে ৩ লাখ এমনিতেই বেড়ে গেছে। তাছাড়া শতভাগ পরিশোধে এলসি খোলার কারণে ব্যবসায়ীরা গাড়ি প্রতি লাভও রাখছেন বেশি। এতে জনপ্রিয় মডেলের গাড়ির দাম ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে গাড়ির বাজারে অস্থিরতা চলছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর বাজার আবার চাঙা হতে পারে।
বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী দেশে শুধু যে প্রাইভেট কার বিক্রি কমেছে তা নয়। মোটর, সাইকেল, বাস, ট্রাকের বিক্রিও কমেছে। শুধু মাত্র অটোরিকশরা বিক্রি বেড়েছে। দেশে ২০২২ সালে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫১টি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছিল। গত বছর সংখ্যাটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৬১টিতে। অর্থাৎ এক বছরে দেশে ২ লাখ ১৭ হাজার ২৯০টি যানবাহনের নিবন্ধন কমেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গাড়ি বিক্রেতা সোলায়মান হোসেন জানান, তারা মূলত পুরোনো গাড়ি বিক্রি করেন। আর আদেশ পেলে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি করেন। দুই ধরনের গাড়ির কেনাবেচাই কমেছে। ২০২২ সালের আগস্টে সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ‘বিলাসপণ্য’ হিসেবে গাড়িকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার কারণে তখন থেকেই শতভাগ এলসি মার্জিন দিয়ে গাড়ি আমদানি করতে হচ্ছে। মূলত তখন থেকেই চাপে পড়ে যান এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে গাড়ির দাম প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
বারিধারা এলাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রেতা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গাড়ির দাম অনেক বেড়ে গেছে। এক বছর আগে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা, এখন বেড়ে ১২৩ টাকা হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দর প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে দুই দিকে দাম সমন্বয় হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পুরো অর্থ পরিশোধ করে এলসি খুলতে হচ্ছে। এ কারণে লাভও বেশি রাখতে হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।