জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন বরিশালে স্বর্ণের দাম পাওয়া গেছে প্রতি ভরি এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। তবে এমন দাম স্বর্ণের বাজারে নয়, বরং মিলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায়। এগুলো আবার নোটারি করে জমা দেওয়া। সত্য-মিথ্যা যাচাই না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা স্থানীয় সুশীল সমাজ ও নির্বাচক পর্যবেক্ষকদের।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ৬টি আসনের প্রার্থীরা হলফনামায় তাঁদের কাছে থাকা মোট ১ হাজার ৫৩০ ভরি স্বর্ণের হিসাব দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে ৭ জনের কাছে কোনো স্বর্ণ নেই এবং ২১ জন স্বর্ণের দাম উল্লেখ করেননি। বাকিরা স্বর্ণের যা দাম উল্লেখ করেছেন তাতে মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম। এদের মধ্যে হলফনামায় ১১ প্রার্থীর দেওয়া স্বর্ণের মূল্যে দাঁড়ায় প্রতি ভরি এক হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা। খোদ স্বর্ণকারেরা বলেছেন, বর্তমানে ১ লাখ টাকার উপরে স্বর্ণের ভরি, এক হাজার টাকা ভরি ছিল ১৯৭২-৭৩ সালে।
স্বর্ণকার মান্না কর্মকার বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের আগে আমাদের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করেছি ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা ভরি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ১ হাজার থেকে ১৪০০ টাকা ভরি ছিল। এখন লাখ টাকা ভরি। সব আমার সামনে হয়েছে। রীতিমতো গল্পের মতো লাগে।’
বরিশাল জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি শেখ মো. মুসা বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ প্রতি ভরি ১ লাখ ৮ হাজার ১২৪ টাকায় বিক্রি করছি। আর ২১ ক্যারেট সোনা বিক্রি করছি ১ লাখ ৩ হাজার ২২৬ টাকায়। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি করছি ৮৮ হাজার ৪৭১ টাকায়। স্বর্ণ কেনার সময় ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট করি।’
স্বর্ণের বাজারের এমন অবস্থার সময় বরিশাল–১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ তাঁর কাছে থাকা উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি স্বর্ণের দাম হলফনামায় উল্লেখ করেছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
বরিশাল–৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাফিজ মল্লিক তাঁর নিজের ৩০ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সামসুল আলম ও জাসদ প্রার্থী মো. মোহসিন তাঁদের কাছে থাকা স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন মাত্র ২ হাজার টাকা ভরি।
বরিশাল–৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী তাঁর নিজের ২০ ভরি স্বর্ণের দাম উল্লেখ না করলেও স্ত্রীর ১০ ভরির দাম বলেছেন ৫০ হাজার টাকা। বরিশাল–৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাঁর কাছে থাকা ১৩০ ভরি স্বর্ণের দাম হলফনামায় উল্লেখ করেছেন প্রতি ভরি ৭ হাজার টাকা দরে।
প্রার্থীদের হলফনামায় এমনভাবে স্বর্ণের দাম উল্লেখ করাকে ভালোভাবে নেননি বরিশালের সচেতন সমাজ। তাঁদের ভাষায়, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের এমন করুণ দশা মেনে নেওয়া যায় না।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মো. আলী জীবন বলেন, ‘সাধারণ জনগণ এসব তথ্যকে কীভাবে নেবে, তা বুঝি না। হলফনামায় সত্য না থাকলে তার কিই–বা দরকার। নির্বাচন কমিশনই বা কী করছে। হলফনামায় হালনাগাদ মূল্য দেওয়ার কথা। ৫০ বছর আগে বিয়ে করে আজও সেই দাম বললে, তা হয় বেমানান। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনের।’
উন্নয়ন সংগঠক জাহানারা স্বপ্না বলেন, ‘এক হাজার টাকা স্বর্ণের ভরি, এটা তো শুনতেই বাজে লাগে। স্বর্ণগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করুক, ১০ হাজার টাকা ভরি আমরা কিনব। এমন হলফনামা কীভাবে গৃহীত হয়? এটা এক ধরনের প্রতারণা।’
এসব হলফনামা আবার নোটারি করে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নোটারি আইনজীবীরা এর দায় নিতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, প্রার্থীদের কথা বিশ্বাস করে তাঁরা স্বাক্ষর করেছেন। স্বর্ণ ক্রয়ের কোনো রশিদ তাঁরা দেখেননি। তাঁদের মতে, তথ্য যাচাই নির্বাচন কমিশনের কাজ।
নোটারি আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রার্থীরা আমাদের স্বর্ণ ক্রয়ের রশিদ দেখাননি। আমরা বিশ্বাসের ওপর ভর করে হলফনামায় সই করেছি। সত্য–মিথ্যা যাচাই নির্বাচন কমিশনের বিষয়। স্বর্ণের ক্যাশমেমো দেখার পর প্রার্থীর মোননয়নের বৈধতা দেওয়া উচিত।’
হলফনামার সঙ্গে ক্যাশমেমো জমা নেওয়ার পরামর্শ দিলেন আরেক নোটারি আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা ৫০০ টাকা ভরিতেও স্বর্ণ কিনতে পারেন। তবে তাঁদের উচিত হলফনামার সঙ্গে ক্যাশমেমো জমা দেওয়া। এটা করলে আজ কোনো প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু ওনারা তা করেননি। সাপোর্টিং পেপার্স এ ক্ষেত্রে জরুরি। আইন আমাদের বিশ্বাসের ওপর কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু যার জিনিস, জবাবদিহি তাঁকে করতে হবে। নির্বাচনি আইনে এসব উল্লেখের বিধি থাকা উচিত।’
এদিকে, প্রার্থীদের মধ্যে রাশেদ খান মেননসহ সাতজন বলেছেন, তাঁদের কোনো স্বর্ণ নেই। কয়েকজন কোনো দামই উল্লেখ করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।