জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে ইলিশের উৎপাদন গত এক যুগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এরই মধ্যে শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।
তবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের মতে, ইলিশের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের মাছ ধরার খরচ ও চাহিদা বাড়ায় তুলনামূলক দামে তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি।
যদি উৎপাদন বাড়িয়ে ক্রেতা পর্যায়ে দাম কমাতে হয় তাহলে ডিম থেকে হওয়া ইলিশের বাচ্চা( ১-৩ ইঞ্চি) ও জাটকা আহরণ শতভাগ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এই লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে চর ঘেরা, বেড়, মশারি ও বাঁধা জালের ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে জানিয়েছেন নিবন্ধিত জেলেরা।
আব্দুল হালিম নামের দখিনের এক জেলে বলেন, উপকূলীয় এলাকার নদীতে চর ঘেরা, বেড় ও বাঁধা জালের কারণে সব থেকে বেশি পোনা মাছ ধরা পড়ে। এরই মধ্যে জাটকাসহ ১-৩ ইঞ্চি ইলিশও আটকে যাচ্ছে। আর ধরা পড়া ইলিশের এ পোনা মাছগুলো চাপিলার নামে বাজারে হামেশা বিক্রি হচ্ছে। এ মাছ যদি আহরণ বন্ধ করা যায় তাহলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।
বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফার মতে, অভিযান চলালেও কোনোভাবেই নিষেধাজ্ঞার সময় ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা আহরণ বন্ধ করা যায় না। এদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর না হলে ভবিষ্যতে মৎস্য সম্পদের ওপরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
বরিশাল নগরের পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, পোনা ধ্বংস না হলে ইলিশের উৎপাদন এখনকার থেকে আরও কয়েকগুণ বাড়বে। এতে বাজারে ইলিশের আমদানি যেমন বাড়বে, তেমনি দামও কমবে।
এখন ইলিশের দামের পেছনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও কাজ করছে বলে জানান তিনি।
ওই ব্যবসায়ীর মতে, আগে ফিশিং বোটের তেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা, এখন তা ১০৯ টাকা, আগে জেলেরা যে চাল খেতো তার দাম ছিল ২৫ টাকা এখন চাল কিনতে হয় ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরের। ফলে মৎস্য আহরণে খরচ তো বেড়েছে। সেই হিসাবটাও তো করতে হবে।
এখানকার ব্যাবসায়িক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, প্রজনন মৌসুমের বাইরেও ইলিশ সারা বছর ডিম দেয়, এজন্য এ মাছটি কম-বেশি সারা বছর পাওয়াও যায়। গত এক যুগে গোটা দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে এটা ঠিক, তবে এ মাছটির চাহিদাও বেড়েছে। আবার আগে জেলেদের মাছ শিকারে যে খরচ হতো, দ্রব্যে মূল্য বাড়ায় তার খরচও প্রতিনিয়ত বেড়েছে। ফলে ইলিশের বাজারে গড় দামে তেমন একটা তারতম্য ঘটেনি।
তিনি বলেন, জাটকার মতো এখন ডিম থেকে হওয়া ইলিশের ছোট বাচ্চাগুলোর ওপরেও প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। অবৈধ এবং ছোট ফাঁসের জালের কারণে ডিম থেকে হওয়া ইলিশের ছোট বাচ্চাগুলোও ধরা পড়ছে এবং মারা পড়ছে। এরই প্রভাব সরাসরি ইলিশের উৎপাদনের ওপর পড়ছে। এই পোনা রক্ষা করা গেলে ইলিশের উৎপাদন আরও কয়েকগুণ বাড়বে। এতে মাছের দর আরও কমবে।
তিনি বলেন, আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল,পটুয়াখালী ও ভোলায় তিন থেকে চারটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিল। তাই সাগর ও উপকূলীয় এলাকার সব মাছ এসব অবতরণ কেন্দ্রে আসতো, বরিশালেও হাজার মণ ইলিশ আসতো, সেখানে এখন তা কয়েকশত মণে গিয়ে ঠেকেছে। গত এক যুগের অধিক সময়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই কয়েকশত ছাড়িয়েছে। ফলে যে যেখানে সুবিধা পাচ্ছে সেখানেই আহরিত মাছ নিয়ে যাচ্ছে, এ কারণে বরিশালে মাছের আমদানি তুলনামূলকভাবে কমেছে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে মাছের উৎপাদন বেড়েছে গোটা দেশেই। এটা বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখি পরিকল্পিত নানা পদক্ষেপের ফল বলা যায়। এখন আরও কিছু পরিকল্পনা হাতে নিলে হিসাবটা পাল্টে যেতে পারে, মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য হবে ইলিশ।
যদিও বিগত সময়ের পরিকল্পনাতেই চলিত মৌসুমেও ইলিশ উৎপাদনে বিগত দিনের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছে স্থানীয় ওই মৎস্য দপ্তর।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগে ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ নদীতে ৬১ হাজার ২৭২ টন ও সমুদ্রে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৯০ টন। এরপর থেকে ধাপে ধাপে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ টন।
২০১০ সাল থেকে ২০২২ সালের মৎস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই ১২ বছরের ব্যবধানে ৪৬ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ২০০৪ সালে জাটকা নিধন রোধ ও ২০০৯ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়। এরপর থেকেই ইলিশের উৎপাদন বাড়তে শুরু করে বরিশাল বিভাগে। এ বছরের আবহাওয়া ইলিশ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। ২৩ জুলাই সাগরে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এখন জেলেরা অবাধে সাগরে ইলিশ শিকার করছে। আশা করছি, বিগত দিনের চেয়ে চলতি মৌসুমে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে। বাজারে ইলিশের আমদানি বাড়লে স্বাভাবিকভাবে দাম কিছুটা তো কমবেই।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, জুন-জুলাই ইলিশ কম পাওয়া যাবে এটা স্বাভাবিক। কারণ এ সময়ে ইলিশ সমুদ্রে থাকে। নদীতে উঠে আসার সঠিক সময় এখন না। ইলিশ নেই এমন ধারণা ঠিক নয়, আবার বর্তমানে বিগত দিনের তুলনায় ইলিশের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি আকারও বড়। পর্যালোচনা অনুযায়ী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ইলিশ পাওয়া যাবে। তখন সমুদ্রে ও নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। সূত্র : বাংলানিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।