জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর কারওয়ান বাজার কাঁচা মাল এবং ফলের আড়তের একটা বড় বাজার। এই বাজারের একজন ব্যবসায়ী মো. উজ্জ্বল হোসেন। তার ফলের আড়তের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আনারস, তাল, এমনকি মৌসুম শেষের তরমুজ। এ চিত্র অনেকটা অস্বাভাবিক বলছিলেন এ ব্যবসায়ী।
তিনি গত ১০ বছর ধরে পারিবারিক এ ব্যবসার হাল ধরেছেন। তাঁদের বংশপরম্পরায় ফলের ব্যবসা প্রায় ৪০ বছরের।
উজ্জ্বল বলেন, আগে এ সময় আড়তজুড়ে থাকত আম। কিন্তু এবার আমদানি যেমন কম, দামও চড়া। তাই আড়ত এবার আমে ভরল না।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আম আসতে শুরু করে। গুটি, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনী—এই সাত প্রধান জাতের আমই বাজারে বেশি।
উজ্জ্বলের কথার সূত্র ধরে পাইকারি ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা, আম উৎপাদনকারীর সঙ্গে কথা বলে ও সরকারের বাজার পর্যবেক্ষণের তথ্য এবং গবেষকদের গবেষণা পর্যালোচনায় জানা যায়, আমের বাজার এবার অস্বাভাবিক। দাম গতবারের দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ জানিয়েছে, এই জন্য কম উৎপাদন, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতিকেই অন্যতম কারণ।
সরকারি হিসাবে দাম প্রায় দ্বিগুণ
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছর জুনে পাইকারিতে প্রতি কেজি হিমসাগর আমের দাম ছিল ৪১ টাকা। এ বছর তা ৭৯ টাকা ৩২ পয়সা।
আর কারওয়ান বাজারের আড়তে হিমসাগরের প্রতি কেজির দাম ৭০ থেকে ১২০ টাকা। কারওয়ান বাজারের একাধিক আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হিমসাগরের দামই সবচেয়ে বেশি, ১২০ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর জুনে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ল্যাংড়ার দাম ছিল প্রায় ৩৯ টাকা। এবার তা ৮০ টাকা ৮৬ পয়সা।
আর কারওয়ান বাজারে দিনাজপুরের সাধারণ মানের প্রতি কেজি ল্যাংড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের ল্যাংড়ার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এ ছাড়া গত বছরের ৪৩ টাকা কেজির আম্রপালি এবার পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা ৫৮ পয়সায়।
কারওয়ান বাজার আদর্শ ফল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম জানান, বাজারে নানা ধরনের আম্রপালি আছে। পাইকারিতে ৬০ টাকার নিচে এ আম পাওয়া যাচ্ছে না।
পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরায়ও দাম চড়া। খুচরায় এবার কোনো আমের কেজি ১০০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন।
তিনি এ বাজারে সাত বছর ধরে ফলের ব্যবসা করছেন। ফরহাদ বলেন, দাম বেশি হওয়ায় এবার বিক্রি কম। এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি খরচ গতবারের চেয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি লেগেছে। শ্রমিকের মজুরি গতবাররে চেয়ে অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। সারের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা। তাই এবার আমের দাম বেশি।
বেড়েছে উৎপাদন খরচ
কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, এবার দীর্ঘ শীতের কারণে আমের মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। এরপর এপ্রিলে শুরু হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে মুকুল ঝরে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ১৫ শতাংশ কম হয়েছে। বাগানমালিকেরা বলছেন, ফলন কমেছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে দেরিতে মুকুল আসা, অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। নওগাঁর সাপাহারের উৎপাদনকারী মো. সোহেল রানা বলেন, ‘এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি খরচ গতবারের চেয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি লেগেছে। শ্রমিকের মজুরি গতবাররে চেয়ে অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। সারের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা। তাই এবার আমের দাম বেশি।’
আম উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের বাড়তি দামের পেছনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দামের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিবিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান তানিয়া পারভীন বলেন, ফলন কম যাওয়া মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমের দাম বাড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।