জুমবাংলা ডেস্ক : প্রশাসন ও খাদ্যবিভাগের মজুতবিরোধী অভিযানের শুরুতে ধানের জেলা দিনাজপুরে বেশ সাড়া ফেললেও আবার আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে ধানের বাজার। বাজারে আবারো কমেছে ধানের সরবরাহ, বাড়তে শুরু করেছে দাম। পাশাপাশি চালের বাজারও রয়েছে স্থিতিশীল। গত চারদিনের অভিযানে অবৈধ বড় বড় মজুতদারদের আড়ালে রেখে এ অভিযান পরিচালনা করায় ধানের বাজার আবারো উর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা। অভিযানের সুফল বয়ে আনতে লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও যারা বিপুল পরিমান ধান কিনে গুদামে মজুত রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের দিকে নজর দেওয়ার গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। যদিও দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন জানান, অভিযানের ফলে ধান বাজারে চলে এসেছে। চালের দাম কমতে বাধ্য। আগামী রমজান মাস পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ধান-চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু করে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। অভিযানের শুরুর দিনেই বিরল উপজেলার পাইকপাড়া এলাকায় ওরিয়েন্টাল এগ্রো হাস্কিং মিলের গুদামঘরে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। অভিযান সাড়া পড়ে যায় ধানের এই জেলায়। ফলে এর পরের দিনই দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানের হাটে অস্বাভাবিক বেড়ে যায় ধানের সরবরাহ। বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম কমে যায় ৩০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত। টানা চারদিনের অভিযানের পর সোমবার থেকে ধানের বাজার আবারও ফিরতে শুরু করেছে আগের অবস্থায়। দিনাজপুর সদর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের হাট গোপালগঞ্জে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অভিযান শুরুর পরের দিন শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এ হাটে ২৬০০ থেকে ২৭০০ বস্তা ধান উঠলেও সোমবার ধান আসে মাত্র ৮০০/৯০০ বস্তা।
গোপালগঞ্জ হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি বিপ্লব কুমার নাগ জয় বলেন, শুক্রবার এ হাটে প্রায় ২৬০০/২৭০০ বস্তা ধান উঠলেও দাম কম থাকায় বেচাকেনা হয় ১৮০০ বস্তা ধান। কিন্তু মাত্র এক হাটের ব্যবধানে আজ সোমবার এ হাটে ধান উঠে ৮০০/৯০০ বস্তা।
ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বস্তাপ্রতি ধানের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় শুক্রবারের তুলনায় সোমবার বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। অভিযান শুরুর পর বিআর-৩৪ জাতের ধান প্রতিবস্তা ৫৪০০ টাকা থেকে নেমে ৪৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই ধান সোমবার বিক্রি হয় ৫২০০ টাকা বস্তা দরে। অনুরূপভাবে বিআর-৫১ ধান ২২০০ টাকা থেকে ২৩০০ টাকায়, বিআর-১১ ধান ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০০ টাকায়, সুমন স্বর্ণ ধান ২৩২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থ্যাৎ সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তিন দিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি-কিছু লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী আছে, যাদের চাল উৎপাদনের সঙ্গে
কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারা ধান কিনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তিনি বলেন, প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ মিলগুলোতে অভিযান চালানোর ফলে মিল মালিকরা
ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে কারা? এটি খুঁজে বের করতে না পারলে এ ধান আমাদেরকেই পরে বেশি দামে কিনতে
হবে।
বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নামে ধানসহ ভোগ্যপণ্য মজুত করছেন। বর্তমানে মিল মালিকদের চাইতে স্টক ব্যবসায়ীদের গুদামঘরে বেশি ধান আছে। মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে কিনে মজুত করছেন। পরে মিল মালিকরাই এসব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আরও বেশি দামে কিনছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।