জুমবাংলা ডেস্ক : স্টিল বডির একটি বড় ফিশিং ট্রলার (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভেসেল) সাগরে একবার মাছ ধরতে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিতে হয় ১০০ টন জ্বালানি তেল। ওই তেলের দাম এতদিন ছিল প্রায় এক কোটি টাকা। এখন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত যোগ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। সাগরে যাওয়া, মাছ ধরা ও ফিরে আসার ২০ দিনের এই ‘খেপে’ ওই পরিমাণ মাছ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সাগরে একবার মাছ ধরতে যাওয়া-আসার সময় মোট ২০ দিন। সেক্ষেত্রে একটি ট্রলারের দিনে জ্বালনি লাগে ৫ টন।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোর মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশই খরচ হয় জ্বালানি তেল কিনতে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ খরচ হলো ট্রলারের ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে জেলেসহ অন্যদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ।
অতিরিক্ত জ্বালানি তেলের দামের কারণে সাগরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরার ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, দিনশেষে তার চাপ পড়ছে ক্রেতার ঘাড়ে। মাছ ধরার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, জ্বালানির দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ, আর মাছের দাম বাড়তে পারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
কর্নফুলী ফিশ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদুর রহমান বলেন, ট্রলার মালিকদের শঙ্কা, ২০ দিনের প্যাকেজে কোনোভাবেই জ্বালানি তেলের ব্যয় পুষিয়ে লাভের মুখ দেখার মতো মাছ সাগরে মিলবে না। তিনি বলেন, একটি বড় ট্রলারে ২০ দিনের খেপে ব্যয় বেড়েছে ৩৫ লাখ। মাঝারি ট্রলারে বেড়েছে ২০ লাখ। বড় ট্রলারে জ্বালানি তেল লাগে ১০০ টন, মাঝারি ট্রলারে ৬০ থেকে ৭০ টন। মোরশেদুর রহমান বলেন, সাগরে মাছ ধরা বরাবরই একটি অনিশ্চয়তার ব্যাপার। আমরাতো সেখানে আর মাছ চাষ করি না। কখনো মাছ পাওয়া যায়, কখনো পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে বড় ফিশিং ট্রলার আছে ২০০টি। আর কাঠের বডির ট্রলার আছে ৬০টি। সবগুলোই চট্টগ্রাম হয়ে সাগরে যাওয়া-আসা করে। দেশের একমাত্র মৎস অবতরণ কেন্দ্রটিও চট্টগ্রামেই অবস্থিত। এর বাইরে আরও প্রায় ১০ হাজার কাঠের তৈরি ইঞ্জিন বোট সাগরে গিয়ে মাছ ধরে। ভোলা এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিশিং বোট চট্টগ্রামের কর্নফুলী নদী হয়ে সাগরে যায়। নোয়াখালী অঞ্চলের ৩০ শতাংশ ইঞ্জিন বোট চট্টগ্রামেই মাছ অবতরণ করে। আবার ইলিশের মৌসুমে সীতাকু- থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় অতিঅগভীর সমুদ্র থেকে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ রেসকিউ বোটে করে মাছ ধরেন জেলেরা। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সব নৌকা ও ট্রলার একসঙ্গে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় গভীর সাগর থেকে পেটে ডিম নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। জেলেদের তৎপরতা থাকে ডিম ছাড়তে আসা কিংবা ডিম ছেড়ে আবার গভীর সাগরে চলে যাওয়ার পথে যেন জালে ধরা পড়ে রুপালি ইলিশ।
গত ২৩ জুলাই থেকে চলতি বছরে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সব ট্রলার ও ইঞ্জিন বোট মাছ ধরতে সাগরে যায়। তবে তখনো জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের বারি মাথায় পড়েনি নৌকা ও ট্রলার মালিকদের। গত ৫ আগস্ট রাতে তেলের দাম যখন বাড়ে তখন বেশিরভাগ ইঞ্জিন বোট ও ট্রলার মাছ ধরে ফিরে এসেছে। এর পর থেকে দুইবার সাগর উত্তাল হয়েছে। ফলে মাছ ধরার সকল ইঞ্জিন বোট ও ট্রলার উপকূলেই অপেক্ষা করছে।
নগরীর ফিশারিঘাটের আড়তদার মোহাম্মদ ইসমাইল কুতুবী বলেন, এখনতো সাগর উত্তাল। দেশের কোথাও ইলিশ ধরা যাচ্ছে না। পতেঙ্গা উপকূল থেকে এক-দেড় ঘণ্টার দূরত্বেই শুধু সাগর কিঞ্চিৎ শান্ত। সেখান থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ফিশারিঘাটে। সেটাই আমরা বিক্রি করছি, দামও একটু বেশি। তিনি আরও বলেন, একটি ইলিশের ওজন যদি এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি হয়, তা হলে সেটির দাম ফিশারিঘাটেই ১৫০০ টাকা।
দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে ট্রলার ও বোটগুলো সাগরে যেতে ভরসা পাচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ওরফে বাবুল সরকার বলেন, জ্বালানি তেলের দাম অবশ্যই কমাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এত বেশি টাকা খরচ করে জেলেরা সাগরে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরতে ছোট একটি ইঞ্জিন বোটের আগে খরচ হতো ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিন লাখ টাকার জ্বালানি তেল, এক লাখ টাকা জেলেদের বেতন-বোনাস। এখন লাগছে ৫ লাখ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।