আবুল কালাম আজাদ : কোরবানি সামনে রেখে বগুড়ায় পশু বিক্রেতা ও ক্রেতারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গতবারের চেয়ে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণেই এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি হবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে পরপর দুই বছর করোনা মহামারী ও চলমান বন্যার কারণে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা অনেকটা কমে যাওয়ায় বেশি দামে পশু কিনে কোরবানি দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন কোরবানিদাতারা।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার ১২টি উপজেলায় ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট চার লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদিপশু কোরবানির যোগ্য করে তুলেছেন। অন্যদিকে এ জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। অর্থ্যাৎ চাহিদার অতিরিক্ত ৬৭ হাজার ৯২০টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৪ হাজার ৯৩৯টি, গাবতলীতে ৪০ হাজার ৩৯৩টি, সারিয়াকান্দিতে ৩৮ হাজার ৮০৭টি, সোনাতলায় ২৯ হাজার ১৮৮টি, শিবগঞ্জে ৪৩ হাজার ৮৪৫টি, কাহালুতে ৩৫ হাজার ৩১২টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩২ হাজার ১৯৭টি, আদমদীঘিতে ৩০ হাজার ৬২টি, নন্দীগ্রামে ২৪ হাজার ৩৫৭টি, শেরপুরে ৪১ হাজার ১৮০টি, ধুনটে ৩৭ হাজার ৭০৫টি ও শাজাহানপুর উপজেলায় ২৯ হাজার ৩১০টি গবাদিপশু কোরবানি উপযোগী করে তোলা হয়েছে।
এসব পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বলদ ও গাভি) দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৮টি, মহিষ এক হাজার ৭৩৩টি, ছাগল এক লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি ও ভেড়া ২৮ হাজার ২২৬টি। গত ঈদে এ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল।
খামারিরা জানান, প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় পশুপালন খরচ বেড়েছে। খামারিরা জানান, এক বস্তা ভুসির দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা, খড়ের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা। একটি গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে অন্তত ছয় মাস লালন-পালন করতে হয়। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। তবে গরুর দাম বাড়লে মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। তাই বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা।
বগুড়া সদরের বানদীঘির সূরা অ্যাগ্রো ফার্মসের মালিক রফিবুল ইসলাম বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশী জাতের ১৫টি গরু পালন করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এ বছর গরু পালনের খরচ বেশি। তাই বাজার কেমন হয় তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর দামও বেশি হতে হবে।
ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু এলে তারা ভালো দাম পাবেন কি না সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। এ বছর বগুড়ার খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে চাহিদার চেয়েও বেশি। তাই কোরবানির জন্য পশু আমদানির প্রয়োজন হবে বলে মনে করছে না জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সামাদ জানান, বগুড়ায় এবারো চাহিদার চেয়ে বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরু লালন পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: সাইফুল ইসলাম বলেন, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকায় আশা করছি খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।