ধর্ম ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ থেকে পালিত হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। কাল থেকে শুরু রমজান মাস। রমজান মাসের রোজা, হজ ও কোরবানির মতো ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধান চন্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তোমার নিকট নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে? বলে দাও- এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজের সময় ঠিক করার মাধ্যম।’ (সুরা বকারা: ১৮৯)
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চন্দ্র মাসের নতুন চাঁদ দেখলে বলে উঠতেন-
اللَّهُمَّ أهِلَّهُ عَلَيْنا باليُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلامَةِ وَالإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল ইয়ূমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বি ও রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এ চাঁদকে সৌভাগ্য, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে উদিত করুন। হে চাঁদ! আল্লাহই হলেন আমার প্রভু এবং তোমারও প্রভু। -সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫১
ছোট্ট এই দোয়ায় রাসুলুল্লাহ (স.) অনেক কিছু প্রার্থনা করেছেন। আমরা দুনিয়ার বিপদ-আপদ থেকে বাঁচার জন্য, নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু প্রিয়নবী (স.) প্রতি মাসের শুরুতে চাঁদ দেখেই এই অবলম্বন চেয়ে নিতেন।
যেকোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়াও এটি। মহানবি (স.) নতুন চাঁদ দেখেই দোয়াটি পড়তেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতি মাসে চাঁদ দেখার চেষ্টা করা এবং চাঁদ দেখে দোয়া করা।
এ দোয়া শুধু রমজানের চাঁদ দেখলেই নয় যেকোনো মাসের নতুন চাঁদ দেখল বলা সুন্নত।
ইসলামি আইনজ্ঞদের মত হলো- চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ মুসলিম জাতির অন্তত একটি দল সর্বদা চন্দ্রমাসের হিসাব সংরক্ষণ করবে। তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। বিশেষত রমজানের চাঁদ দেখার ব্যাপারে একাধিক হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৩২৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের জন্য শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রেখো।’ (সুনানে তিরমিজি: ৬৮৭)
সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো রমজানের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসাধারণকে চাঁদ দেখতে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণ মুসলিমরাও আগ্রহের সঙ্গে চাঁদ দেখে। দুই তিন দশক আগেও বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম অঞ্চলে দলবেঁধে রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার প্রচলন ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা বহুলাংশে হ্রাস পাচ্ছে।
যেহেতু রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে রমজানের চাঁদ দেখতেন এবং চাঁদের দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তাই ইসলামি আইনজ্ঞরা বলেন, সাধারণ মুসলমানের জন্য চাঁদ দেখা মোস্তাহাব।
নতুন মাসের চাঁদ দেখে মহানবি (স.) খুশি প্রকাশ করতেন এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (স.) নতুন চাঁদ দেখে বলতেন, ‘কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যাণ ও হেদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আমি তার ওপর ঈমান আনলাম- এই বাক্য তিনবার বলতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর প্রশংসা যিনি অমুক মাস শেষ করলেন এবং এই মাস এনে দিলেন।’ (আবি দাউদ: ৫০৯২)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।