দেবাশীষ দত্ত : ‘এমন আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পের খুব দরকার। এতে বিভিন্ন দেশের মানুষের মেলামেশার সুযোগ হয়। বিশ্বের শিল্পকলা ও রাজনীতির খোঁজ পাওয়া যায়, যা শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে একজনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
কথাগুলো বলছিলেন ভারতের শিল্পী শুভজিৎ সামন্ত। ১৭তম ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কুষ্টিয়া শহরের পাশে রহিমপুরের স্মরণ মৎস্যবীজ খামারে এবারের আর্ট ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন তিনিসহ ৪০ জন শিল্পী। ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের শিল্পীরা যোগ দিয়েছিলেন এবারের আয়োজনে। গতকাল শনিবার ছিল এই আয়োজনের শেষ দিন।
শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ কুষ্টিয়ার শিল্পী দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় এ আর্ট ক্যাম্প শুরু করেছিলেন। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় এ আর্ট ক্যাম্পের যাত্রা। ২০০৯ সাল থেকে এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক।
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারতসহ প্রায় ২০টি দেশের আনুমানিক ২০০ শিল্পী অংশ নিয়েছেন এই আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের ২৫ থেকে ৩০ তারিখ কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই আন্তর্জাতিক আসর। প্রতিবছর একজন কিউরেটরের নেতৃত্বে এটি পরিচালিত হয়। এবারের কিউরেটর ছিলেন জাপানের শিল্পী রেইকো সিমিজিউ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্যাম্প বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পী ও চিন্তকেরা আসেন এখানে।
তাঁদের চিন্তা প্রক্রিয়া এবং শিল্পসৃজনকে আমরা এক সুরে বাঁধতে চেয়েছিলাম। আমরা দেখেছি, প্রকৃতির সে ছন্দের মতো শিল্পীরাও তাঁদের চিন্তা ও কাজ দিয়ে মানুষ এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানেও শিল্পীরা সে কাজটিই করেছেন। প্রকৃতির ছন্দকে প্রকাশ করেছেন তাঁদের কাজের মাধ্যমে।’
এবারের ক্যাম্পে স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে শিল্পীরা তৈরি করেছিলেন ইনস্টলেশন আর্ট। সঙ্গে ছিল বিভিন্ন থিমের একক ও যৌথ পরিবেশনা। এবারের থিম ছিল ‘সিম্ফনি’।
মালয়েশিয়ান তরুণ শিল্পী আমার ইদ্রিস বলেন, কুয়ালালামপুরের যে বাসায় তিনি থাকেন, তার পাশেই আছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকেরা। তিনি তাঁদের দেখছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। সে থেকে বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা তৈরি হয় ইদ্রিসের। সেই ইচ্ছা থেকেই এখানে এসেছিলেন তিনি।
এবারের ক্যাম্পে এসেছিলেন চারুশিল্পী ও সংগীতশিল্পী কনক আদিত্য। তিনি বলেন, ‘এখন যে সময় যাচ্ছে, সেটা বিষণ্নতায় ভরা। একদিকে যুদ্ধ, আমাদের ভেতর দেশভাগের ক্ষত, এসবের অভিঘাত সমাজের সদস্য হিসেবে শিল্পীরা সহ্য করতে পারছেন বলে মনে হয় না। সে জন্য তাঁরা শান্তি ও স্মৃতির মধ্যে আশ্রয় নিচ্ছেন। এবারের কাজগুলো দেখে তা-ই মনে হলো।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।