বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : মানুষ যেভাবে চলাফেরা করে কিংবা চিন্তা করে, কোনো যন্ত্রের পক্ষে কী তা অনুকরণ করা সম্ভব? এক দশক আগে যদি আমাকে এ প্রশ্নটা করা হতো, আমি হয়তো বলতাম, ভেবে দেখতে হবে।
আমি জানি মস্তিষ্ক যেভাবে কাজ করে, তা এখনো একটি রহস্যময় বিষয়। তা সত্ত্বেও গত বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যেভাবে এগিয়েছে, তাতে করে আমাদের মনোভাব সম্পূর্ণ বদলে গেছে। গত এক বছরে এআই ব্যবহার করে এমন সব প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে যা অনেক বেশি নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে। মানুষ যেভাবে কাজ করে কিছুটা সেভাবেই এসব প্রোগ্রাম কাজ করে। তবে এটাও সত্যি এখনো রোবট অনেক ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে পিছিয়ে আছে।
নৈপুন্য, গতি, ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে রোবটকে মানুষের পর্যায়ে আসতে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু যথাযথ প্রযুক্তি আমাদের হাতে আসলে রোবটের ব্যবহার যে কতটা বিস্তৃত হতে পারে তা আমাদের কল্পনাতীত। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় রোবটের ব্যবহার উদ্ধারকর্মীদের প্রাণহানি কমাতে পারে। করোনার মতো সংক্রামক মহামারি পরিস্থিতিতেও রোবট সাহায্য করতে পারবে।
আর খামারের কথা যদি ধরেন, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের পরিবর্তে রোবট ব্যবহার করা যাবে। তারা মানুষের চেয়ে বেশি সময় খেতে কাজ করতে পারবে।
তবে রোবটের বহুল ব্যবহার নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের বিষয়টিও আমি বুঝি। কারণ এতে করে সমাজে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে চাকরি হারায়। কিন্তু এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার ও বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে তা ভালোভাবে সামাল দেওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাস্তবতা হলো আমাদের অর্থনীতিতে বিপুলসংখ্যক কর্মী সংকট রয়েছে। তাছাড়া কিছু কাজ আছে যা মানুষের জন্য বেশ অপ্রীতিকর। এসব কাজে রোবট ব্যবহার করা যায়। তাই সব দিক বিবেচনায় যথাযথভাবে রোবট ব্যবহার করা গেলে তা আমাদের জন্য বরং নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও বেশি উৎপাদনশীল হবে।
এসব কারণে দেশ-বিদেশের কিছু স্টার্ট-আপ রোবটিক্স প্রযুক্তি কোম্পানির কাজ নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। এসব কোম্পানি রীতিমতো রোবটিক্স বিপ্লব আনছে। এ ধরনের কয়েকটি রোবটিক্স কোম্পানির সঙ্গে আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
অ্যাজিলিটি রোবটিক্স
আমেরিকার ওরেগনভিত্তিক এ কোম্পানিটি এমন রোবট তৈরি করছে যেগুলো মানুষ যে পরিবেশে কাজ করে সে ধরনের পরিবেশে কাজ করতে পারে। এটির আকার অনেকটা মানুষের মতোই। কোম্পানিটি বলছে, এটি মানুষ–কেন্দ্রিক প্রথম রোবট। এক সঙ্গে অনেক ধরনের লজিস্টিক কাজ করতে পারে রোবটটি।
টেভেল
এটি তেল আবিবভিত্তিক একটি রোবট কোম্পানি। কৃষকদের কাজে সহায়তা করার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এ রোবট মাঠে সারা দিন কাজ করতে পারে। স্বয়ংক্রিয় এ রোবট উড়ে উড়ে বাছাই পাকা আপেল বা অন্য ফল তুলতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
অ্যাপট্রনিক
আমেরিকার অস্টিনভিত্তিক এ কোম্পানিটি এমন রোবট তৈরি করছে যেগুলো প্রায় সব ধরনের দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। কারখানায় বাক্স ওঠানো–নামানো থেকে শুরু করে ঘরের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবে এটি। তাছাড়া এটিকে নতুন ধরনের কাজ শেখানো যাবে।
রোমেলা
ক্যালিফোর্নিয়ার রোবটিক্স অ্যান্ড মেকানিজমস ল্যাব বা রোমেলা এমন রোবট তৈরি করছে যেগুলো পাথুরে এবং উঁচু-নিচু জায়গায় চলাফেরা করতে পারে। সাধারণ রোবট এ ধরনের জায়গায় হাঁটাচলা করতে পারে না। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত রোবোকাপ প্রতিযোগিতায় এটি অংশগ্রহণ করে।
ফিল্ড এআই
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক আরেকটি রোকটিক্স স্টার্ট-আপ কোম্পানির নাম বলেই আমি আজকের আলোচনা শেষ করব। এটি হলো ফিল্ড এআই। কোম্পানিটি নিজে কোনো রোবট তৈরি করে না। তবে রোবট নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হার্ডওয়্যার তৈরি করে।
ফিল্ড এআইয়ের হার্ডওয়্যার দিয়ে এসব রোবট তৈরি করা যাবে, যেগুলো তাদের চারপাশ অনুভব করতে পারবে। ভূমি, আকাশ বা পানিতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস ছাড়াই চলাচল ও যোগাযোগ করতে পারবে।
লেখাটি বিল গেটসের ব্লগ পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন তামান্না–ই–জাহান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।