বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বিভিন্ন ফিঙ্গারপ্রিন্ট একই ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে কিনা তা প্রযুক্তিটি ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে। তবে, তারা নিশ্চিত নন, এটি কীভাবে কাজ করে।
একটি বিশ্বাস বা ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে একজন ব্যক্তির হাতের প্রতিটি আঙুলের ছাপ সম্পূর্ণ আলাদা। তবে, এ ধারণাকেই এখন চ্যালেঞ্জ করছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা।
প্রায় ৬০ হাজার ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওপর পরীক্ষা চালানোর জন্য একটি এআই টুলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মার্কিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা দেখতে চেয়েছেন এর মধ্যে কোনগুলো একই ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট তা এআই শনাক্ত করতে পারে কিনা।
গবেষকদের দাবি, বিভিন্ন ফিঙ্গারপ্রিন্ট একই ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে কিনা তা প্রযুক্তিটি ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে। তবে, তারা নিশ্চিত নন, এটি কীভাবে কাজ করে।
“আমরা নিশ্চিত নই কীভাবে এআই এটি বের করে” – বলেছেন গবেষণাটির দায়িত্বে থাকা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রোবট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হড লিপসন।
ফরেনসিক
গবেষকরা ধারণা প্রকাশ করেছেন এআই টুলটি যেভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করেছে, সেটি সম্ভবত প্রথাগত পদ্ধতির চেয়ে আলাদা। একটি আঙুলে থাকা সব সূক্ষ্ম দাগ কীভাবে শেষ ও আলাদা হয় সেটির ওপরে নজর না দিয়ে, এআই দেখে আঙুলের মাঝের দাগগুলোর গঠন। এগুলো ‘মিনুসিয়া’ নামে পরিচিত যার অর্থ কোনো কিছুর ছোট, সুনির্দিষ্ট বিবরণ।
‘এটি স্পষ্ট যে এআই প্রথাগত মার্কার ব্যবহার করছে না, যা ফরেনসিকে কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে’’ – বলেন অধ্যাপক লিপসন।
‘মনে হচ্ছে এটি আঙুলের মাঝে ঘূর্ণির মতো দাগের বাঁক ও কোণ ব্যবহার করছে।’
অধ্যাপক লিপসন আরও বলেছেন তিনি এবং একজন স্নাতক ছাত্র গ্যাবে গুও উভয়েই এই ফলাফল দেখে অবাক হয়েছিলেন।
‘আমদের খুব সন্দেহ হয়েছিল এবং দুবার চেক করতে হয়েছে’– আরও বলেন তিনি।
তবে, এটি এ খাতের অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের জন্য বড় খবর না-ও হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
আলাদা ফিঙ্গারপ্রিন্টের ধারণা কখনোই একেবারে নিশ্চিত ছিল না, বলেছেন যুক্তরাজ্যের হাল ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক সায়েন্সের অধ্যাপক গ্রাহাম উইলিয়ামস।
‘আমরা আসলে জানি না যে আঙুলের ছাপ স্বতন্ত্র’– বলেন তিনি।
‘আমরা যা বলতে পারি তা হল, আমাদের জানা মতে এখন পর্যন্ত কোনও ফিঙ্গারপ্রিন্ট একাধিক ব্যক্তির হাতে পাওয়া যায়নি।’
অপরাধের দৃশ্য
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণার ফলাফলে, একটি ডিভাইস আনলক করতে বা কাউকে শনাক্ত করতে ব্যবহার হওয়া বায়োমেট্রিক্স এবং ফরেনসিক বিজ্ঞান উভয়কেই প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে লিখেছে বিবিসি।
উদাহরণ হিসেবে, যদি অপরাধের দৃশ্য ‘ক’-তে একটি অজ্ঞাত বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায়, এবং অপরাধের দৃশ্য ‘খ’-তে একটি অজ্ঞাত তর্জনীর ছাপ পাওয়া যায়, তবে এ দুটিকে বর্তমানে একই ব্যক্তির হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। কিন্তু এই এআই টুল হয়তো দুটি ছাপের মধ্যে যোগসূত্র বের করতে পারবে।
তবে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটির কারোরই ফরেনসিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এবং তারা স্বীকার করেছেন এটি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
এআই টুল সাধারণত প্রচুর পরিমাণ তথ্যের ওপর প্রশিক্ষিত হয় এবং এই প্রযুক্তিটি আরও বিকাশের জন্য ব্যাপক পরিমাণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রয়োজন হবে।
পাশাপাশি, এই মডেলটির প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত সব ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভাল মানের ছিল। তবে, বাস্তবে বেশিরভাগ সময় আংশিক বা খারাপ প্রিন্টও পাওয়া যায়।
‘আমাদের টুলটি আদালতের মামলায় প্রমাণ পেশ করার জন্য যথেষ্ট ভাল না হলেও এটি ফরেনসিক তদন্তে সূত্র ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভাল’ – বলেন গুও।
এদিকে আরেক ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. সারাহ ফিল্ডহাউস বলেছেন, তিনি মনে করেন না যে এই পর্যায়ে থাকা গবেষণাটি ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে কোনো ‘উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ ফেলবে।
তিনি আরও বলেছেন, তার প্রশ্ন রয়েছে এআই টুলটি যেসব মার্কারের ভিত্তিতে কাজ করে সেগুলো প্রিন্ট সার্ফেসের সংস্পর্শে আসায় ত্বক কীভাবে বাঁকায় তার ওপর নির্ভর করে একইরকম থাকে কিনা। পাশাপাশি, প্রথাগত মার্কারের মতো, এগুলো সবসময় একই থাকে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে, এ ক্ষেত্রে এআই কীভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে গবেষকরা অনিশ্চিত হওয়ায় এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন হতে পারে বলে লিখেছে বিবিসি।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটির পিয়ার-রিভিউ হয়ে গেছে এবং আগামী শুক্রবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে এটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
তবে, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কাউন্টি চেশায়ারের এক জোড়া যমজ হয়তো সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের দাদি ক্যারল বিবিসিকে বলেছেন, তার দুই নাতি তাদের নিজের আঙ্গুল দিয়ে একে অপরের আইফোন খুলতে পারেন।
‘তারা আমাকে ক্রিসমাসের দিনে দেখিয়েছিল’– বলেন তিনি।
‘আমাদের বলা হয়েছিল তারা জন্ম থেকেই একইরকম। তবে, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদের মধ্যে পার্থক্য বলতে পারি।’
তিনি আরও দাবি করেছেন তার নাতিরা মোবাইলের ফেইশল রিকগনিশন ফিচারটিকেও ফাঁকি দিতে পারে।
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুসারে, একজন মানুষের জন্মের আগেই তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি হয়।
গত বছর প্রকাশিত গবেষণায় উঠে এসেছে, ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরির পেছনে জিনগত প্রক্রিয়াটি জেব্রা এবং চিতাবাঘের মতো প্রাণীর গায়ের চিহ্নগুলো তৈরির মতোই হতে পারে। এই তত্ত্বটি ১৯৫০-এর দশকে ব্রিটিশ গণিতবিদ ও যুক্তিবিদ অ্যালান টিউরিং প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।