জুমবাংলা ডেস্ক : চাকরি হারিয়েছেন, হত্যার হুমকি পেয়েছেন, দুদকের উপপরিচালক থেকে পরিণত হয়েছিলেন দোকানের কর্মচারিতে। সেখান থেকে সহৃদয় ব্যবসায়ীর কল্যাণে বেসরকারি চাকরি। সেই শরীফ উদ্দিন অবশেষে ন্যায়বিচার পেতে চলেছেন। বিনা নোটিশে দুদক কর্মকর্তা শরীফকে চাকরিচ্যুত করা কেন অবৈধ নয় বলে রুল জারি হয়েছে উচ্চ আদালত থেকে। ফলে এই সাবেক দুদক কর্মকর্তার ঘটনাটি আবারও এসেছে মানুষের নজরে। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি আবার দুদকের চাকরিটি ফিরে পাবেন? মিলবে ক্ষতিপূরণ?
হিরো থেকে জিরো
শরীফ উদ্দীন কর্মরত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কক্সবাজার দপ্তরে। তিনি কক্সবাজারে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা দায়ের ও তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়েন।
দুদকে কর্মরত থাকার সময় শরীফ উদ্দিনের অনুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়ের মধ্যে রয়েছে— কক্সবাজারে কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্প ও মেগা প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি এবং কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ, চট্টগ্রাম মেডিকেলে অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ দুর্নীতি, এনআইডি জালিয়াতি, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা নিয়ে দুর্নীতি, ইয়াবা কারবারিদের সম্পদ গোপন ইত্যাদি।
এসব তদন্তের সূত্র ধরেই আলোচিত-সমালোচিত হন শরীফ। এসব তৎপরতার জন্য জনগণের মধ্যে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নানামুখী চেষ্টায় তাকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালী। এরপর আটকে দেওয়া হয়েছিল পদোন্নতিও।
এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের ইসি সহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। এর পর প্রথমে তাকে বদলি এবং শেষমেশ চাকরিচ্যুত করা হয়।
প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওই মামলা করার পর ২০২১ সালে জুনের ১৬ তারিখে শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী বদলী করা হয়। পটুয়াখালীতে কর্মরত অবস্থায় ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি শরীফ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যাতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে শরীফকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
এ ঘটনার পর ওই বছরই ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ দুদকের চাকরি হারান শরীফ। দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮-এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যান মো. মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ উপসহকারী পরিচালক তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেন। রাতারাতি ভাগ্য বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন শরীফ উদ্দিন।
আদালতের রায়
এরপর আদালতে বেশ কয়েকবার যাতায়াত করেন শরীফ, যার সর্বশেষ ফল হিসেবে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন– বিনা নোটিশে দুদক কর্মকর্তা শরীফকে চাকরিচ্যুত করা কেন অবৈধ নয়। ফলে এই সাবেক দুদক কর্মকর্তার ঘটনাটি আবারও এসেছে মানুষের নজরে।
আদালতের বাইরেও শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সে সময়ে চাঞ্চল্য তৈরি করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দুদকের কর্মীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন হয়। প্রভাবশালীদের চাপের কারণেই শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শরীফ উদ্দিনের ব্যাপারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রতিবেদনই প্রকাশিত হয়।
শরীফের সম্পদ কত
এদিকে, শরীফ উদ্দিন দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি ও চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ২০২২ সালে। ওই বছরের ১১ এপ্রিল তা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু তখন পর্যন্ত মো. আহসান আলীর মামলায় দুদকের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শরীফের রিটের শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ মুলতবি আদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৬ জুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন শরীফ।
এরপর ৫৪ (২) বিধি ও বিধিটির ক্ষমতাবলে চাকরিচ্যুতির বৈধতা নিয়ে শরীফ গত বছর হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল জারি করেন। একইসঙ্গে স্বপদে পুনর্বহাল করে তাকে কেন সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল এ রুল শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। শরীফ উদ্দিনের গল্পের শেষ পরিণতি কী হয়, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।