জুমবাংলা ডেস্ক : কুরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৌলভীবাজারের চামড়া ব্যবসায়ীরা। লবণ সংকট আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ব্যবসায়ীরা সব চামড়া সংরক্ষণও করতে পারেননি। তাই নষ্ট হয়ে যাওয়া চামড়াগুলো ফেলে দিয়েছেন নদীর পানিতে। গত কয়েক বছর ধরে চামড়া ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে এ ব্যবসায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বালিকান্দি গ্রামে জেলার সব কুরবানির পশুর চামড়া জমা হয়। এই গ্রামের অনেক মানুষ বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এখানে চামড়া প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পাঠানো হয় ঢাকায়। প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতের জন্য লবণ জরুরি উপকরণ। প্রায় প্রতি বছর ঈদে লবণ সংকট এবং লবণের দাম বেড়ে যায়।
এজন্য এবার ঈদের আগে চামড়া ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে দাবি জানান- লবণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সময়মত লবণ না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ব্যাহত হয়েছে চামড়া সংরক্ষণের কাজ। অন্ধকারে শ্রমিকরা চামড়া সংরক্ষণের কাজ করতে না পারায় নষ্ট হয়েছে অনেক চামড়া। সেগুলো ফেলে দিতে হয়েছে মনু নদে।
সোমবার (১১ জুলাই) সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের বালিকান্দি গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীরা ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে শত শত পশু চামড়া মনু নদীতে ফেলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অধিকাংশ চামড়া তারা প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত শেষে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এ বছর বন্যাকবলিত অনেক এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেননি। ব্যবসায়ীরা যে সমস্ত এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেননি সেই সমস্ত এলাকার কুরবানির পশুর চামড়া মাটির নিচে গর্ত করে রেখেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, প্রতিবছর কুরবানির ঈদ আসলে লবণের দাম বেড়ে যায়। এ বছর বড় সমস্যা দেখা দেয় বিদ্যুতের লোডশেডিং। ঈদের রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অন্ধকারে শ্রমিকরা কাজ করতে না পারায় অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে নদীতে।
একাধিক চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদ আসলেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। ট্যানারি সিন্ডিকেট তো আছেই, তার মধ্যে এবার লবণের দাম বেড়ে প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করা যায়নি। এজন্য প্রায় কয়েক হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে। এখানে যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে সেজন্য পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে ঈদের আগে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তারা কিন্তু কাজ হয়নি।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মো. আনোয়ার জানান, বালিকান্দি গ্রামের চামড়া ব্যবসার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের। প্রায় প্রতি বছর অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। লোকসানে পড়ে এ ব্যবসা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা বলে হাতেগোনা কয়েকজন কোনোমতে টিকে আছেন।
তিনি আরও বলেন, জেলার সাতটি উপজেলায় অর্ধলক্ষাধিক পশু কুরবানি হয়েছে এবার। বালিকান্দির ব্যবসায়ীরা ২০ থেকে ২৫ হাজার চামড়া ক্রয় করেছেন। আগামীতে চামড়া রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, রাতে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বালিকান্দি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না ঠিক কিন্তু লবণ সংকটের বিষয়টি ঠিক না। সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় লবণ আছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে দাবি করেছিলেন, লবণ ক্রয়ের জন্য তাদের কাছে টাকা নেই সরকার যাতে লোন বা ধার হিসেবে তাদের টাকা দেয় কিন্তু এরকম কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।