আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফাস্ট ফুড সুস্বাদু হলেও তা যে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷ এক স্লো ফুড আন্দোলন সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
উগান্ডার অ্যাডওয়ার্ড মুচিবি পুষ্টিকর খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর পরিস্থিতির উন্নতি করার ব্রত নিয়েছেন। ‘স্লো ফুড’ ইন্টারন্যাশানালের কর্ণধার, হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি ‘স্লো ফুড’ ইন্টারন্যাশানালের প্রেসিডেন্ট। আমি উগান্ডার চাষি ও কৃষিবিদ। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যাতে ভালো, পরিষ্কার ও ন্যায্য খাদ্যের নাগাল পায় এবং উপভোগ করে, সেটাই আমার লক্ষ্য।’
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে অ্যাডওয়ার্ড ‘স্লো ফুড’ নামের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছেন। কয়েক বছরের মধ্যে ১৬০টি দেশে তার প্রতিষ্ঠান পা রেখেছে। তিনি বছরে কয়েক বার ব্রা শহরে সেই আন্দোলনের সদর দফতরে যান।
মুচিবি মনে করেন, ‘উগান্ডার একজন আফ্রিকান হিসেবে আমার কাছে স্লো ফুডের অর্থ তৃণমূল স্তরে এমন এক নেটওয়ার্ক, যা খাদ্য সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলতে স্থানীয় সমাজের সাথে কাজ করে, সহায়তা করে। আমরা চাষি, তরুণ প্রজন্ম, আদিবাসি সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করি।’
আফ্রিকার পূর্বে উগান্ডার কিগোবা শহর অ্যাডির জন্মস্থান। সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে তরুণ বয়সেও তিনি খেতে কাজ করতেন। তখন তিনি ভাবতেও পারেননি, টেকসই কৃষি পদ্ধতি কোনো একদিন তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠবে।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অ্যাডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘আমাকে স্কুলের শাস্তি হিসেবে চাষ করতে হতো। কিন্তু পরিবর্তন আনতে সেই শাস্তি আমার জীবনের লক্ষ্য ও চালিকাশক্তি হয়ে উঠলো।’
২০০৬ সালে উগান্ডায় স্লো ফুডের সূচনা ঘটেছিল। নোয়েল নানইয়ুনজা নামের চাষির ক্ষেত কিবোগার স্লো ফুড গ্রুপের মডেল হয়ে ওঠে। উদ্ভাবনী চাষের পদ্ধতি ও চিরায়ত ঐতিহ্যের মধ্যে মেলবন্ধন বাকিদেরও প্রেরণা জুগিয়েছিল।
অ্যাডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘অনেক গাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। অনেক পদ্ধতি, অনেক খাদ্য সংস্কৃতিও হারিয়ে যাচ্ছে। স্লো ফুড নেটওয়ার্ক প্রতিদিন সেগুলো বাঁচানো ও সংরক্ষণের কাজ করছে। স্লো ফুড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায় বিলুপ্ত প্রায় পণ্য শনাক্ত করতে পাচ্ছে।’
স্লো ফুড উগান্ডার সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। অনেক জায়গায় সেই প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। তাদের কার্যকলাপের মধ্যে স্লো ফুড গার্ডেন্স, স্লো ফুড ইয়ুথ নেটওয়ার্ক এবং স্থানীয় পণ্যের ফার্মার্স আর্থ মার্কেট এবং তথাকথিত শেফস অ্যালায়েন্সও রয়েছে।
সেই উদ্যোগ সম্পর্কে মুচিবি বলেন, ‘কুক্স অ্যালায়েন্সে যোগ দিতে হলে সবার আগে রাঁধুনীদের আকাঙ্ক্ষা এবং খাদ্য প্রণালীতে পরিবর্তনের তাগিদ থাকতে হবে।’
বেটি নাকাটো এক ক্যাটারিং পরিষেবা চালান। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি স্লো ফুডের সাথে যুক্ত। সেই সময়কালে তিনি চিরায়ত পদগুলো রান্নার শিল্পের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন।
বেটি মনে করেন, ‘ঐতিহ্যবাহী খাদ্য আমাদের সত্যি আমাদের সংস্কৃতি আরো বড় আকারে গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা একাত্মতার অনুভূতি পাচ্ছি। স্লো ফুডের এই উদ্যোগের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। এই সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবার বদলে খাদ্যের ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতায়ন করছে।’
ইটালির উত্তরে পিয়েদমন্ট স্লো ফুড আন্দোলনের উৎস ওয়াইন, হেজেলনাট বাদাম, ট্রাফেল ছত্রাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কৃষিপণ্যের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত।
সেই সংগঠনের দূরদর্শী প্রতিষ্ঠাতা কার্লো পেত্রিনি কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্টের সাথে ইটালির ফাস্ট ফুড চেইনগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছেন। ১৯৮৬ সালে মূল আন্দোলন শুরু হয়। কাকতালীয়ভাবে সে বছরই অ্যাডওয়ার্ড মুচিবি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘কার্লো পেত্রিনির মতো বড় মানুষের কাছ থেকে নেতৃত্ব গ্রহণ করা একটা চ্যালেঞ্জ। আমার কাছে সেটা শিক্ষার এক সুযোগও বটে। আমার মনে হয়, আমার অনেক কিছু দেয়ার আছে। বিশ্বের সাথে আমার দেশের, আমার সম্প্রদায়ের, আমার মহাদেশের অনেক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। একমাত্র এভাবেই আমরা উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বেড়ে চলা ব্যবধান দূর করতে পারি।’
ইটালির ব্রা শহরে স্থানীয় কৃষিপণ্য নিয়ে চাষিদের হাট বসেছে। এমন জায়গায় কৃষিবিদ হিসেবে অ্যাডোয়ার্ড স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি সেখানকার স্লো ফুড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ব্রা আমাকে অন্যান্য সংস্কৃতি, অন্যান্য মানুষের সাথে আদান-প্রদানে সাহায্য করেছে। সেইসাথে স্লো ফুডের ঐতিহাসিক জন্মস্থানের চেতনা বোঝাও আমার কাছে সহজ হয়েছে।’
স্লো ফুড বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। অ্যাডি সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অ্যাক্টিভিস্টদের সাথে মিলিত হন। তিনি শিক্ষা ও সচেতনার ক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগ করতে চান।
অ্যাডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘রেস্তোরাঁ, পণ্যের ফার্ম, আফ্রিকায় স্লো ফুড গার্ডেন, স্লো ফুড ইয়ুথ অ্যাকাডেমির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে চাই। আমাদের খাদ্য, সেই খাদ্য উৎপাদনের প্রণালী কিভাবে আমাদের গ্রহ ও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তুলে ধরে আমরা এত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছি।’
অ্যাডি মুচিবির মাথায় নানা উদ্ভাবনী আইডিয়া ঘোরাফেরা করে। উগান্ডায় স্লো ফুড সদর দফতরে প্রায়ই সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়।
তবে নিজের মা-বাবার ফার্ম ও চাষিদের খেতেই তিনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আস্তিন গুটিয়ে তিনি সেখানে কাজে নেমে পড়েন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।