জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সার্কেল অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে এবার তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ। সেখানেই মূলত গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিআরটিএর যাবতীয় কাজ করে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যদিও বিআরটিএ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএর সব সার্কেল অফিসের কাজ বাড়তি টাকার বিনিময়ে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে চলে এসব অপকর্ম। বিআরটিএ হেল্প ডেস্ক, বিআরটিএ তথ্যকেন্দ্র, বিআরটিএ সেবাকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপে মূলত সক্রিয় বিআরটিএ ‘স্মার্ট দালালরা’। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তারা ১০-১২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। আর অন্যান্য কাজের জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি থেকে ২-৩ হাজার বাড়তি টাকার বিনিময়ে করে থাকেন। যদিও অনেক সময় টাকা নিয়ে কাজ না করার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে।
মো. সাদ্দাম নামের এক দালাল বিআরটিএ হেল্প ডেস্কে ঘোষণা দিয়ে জানান, বিআরটিএ সব শাখায় লাইট লাইসেন্স থেকে মিডিয়াম বা হেভি, লাইসেন্স নবায়ন, নাম সংশোধন, হারিয়ে যাওয়া লাইসেন্স তুলতে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন। পরে এই প্রতিবেদক তার সঙ্গে পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে এই ফেসবুক গ্রুপে আছি। অনেকেই আমার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করায়। তিন ধাপে টাকা দিয়ে করতে পারেন। কোনো পরীক্ষার ঝামেলা ছাড়াই আমার কাছ থেকে করতে পারেন বিআরটিএর যেকোনো কাজ। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন সাদ্দাম।
সাদ্দাম একা নন, দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায় এ রকম আরও অনেকেই আছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে টার্গেট করে বিআরটিএ সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চলছে তাদের এসব কাজ। গ্রাহকরা বিআরটিএর সেবা দ্রুত এবং হয়রানি ছাড়া করতে মূলত তাদের আশ্রয় নেন। এই সুযোগে দালালরা ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রাহকদের কাছ থেকে।
মো. রাকিব নামের এক কলেজশিক্ষার্থী বলেন, ‘বিআরটিএ সেবাকেন্দ্র নামের ফেসবুক গ্রুপ থেকে এক দালালের পোস্ট দেখে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দিয়েছিলাম বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো ১ সার্কেলের জন্য। কিন্তু কয়দিন পর আর তার ফোন নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায়নি। সে সময় আমার ৩ হাজার টাকা ধরা খেতে হয়েছে। তা ছাড়া, দেশ এখন এত ডিজিটাল হয়েছে। এসব দালালদের চাইলে কিন্তু বিআরটিএ থেকে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এদের কেউ কিছু করছে না। প্রকাশ্যে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে এই দালালরা।’
বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, এই সার্কেল অফিস দালালমুক্ত করতে। আর স্মার্ট বিআরটিএ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দালালবিরোধী অভিযান মাঝেমধ্যেই করা হয়। আর ফেসবুকে যারা এই সার্কেল অফিসের নাম দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়, তাদের কয়েকজনকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ধরা হয়েছে। এগুলো অব্যাহত থাকবে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সেবাকেন্দ্র নামের ফেসবুক গ্রুপ চালু করা হতো, তাহলে যারা প্রতারক চক্র আছে তারা প্রতারণা করতে পারত না। আবার অনেক সময় এসব মাধ্যম ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিআরটিএর উচিত, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। তা ছাড়া উন্নত দেশের আদলে ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেমের অনেক কিছুরই পরিবর্তন আনা দরকার।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘যারা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে বিআরটিএর নাম বলে এসব অপকর্ম করে, সেই দালালদের বিরুদ্ধে আমারা আইজিপি মহোদয়ের কাছে মামলা করার জন্য নম্বরগুলো দিয়েছি। আরও নম্বর খোঁজা হচ্ছে। দালালদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।