বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ভয়েজার ১ নভোযান ছুটে চলেছে মহাবিশ্বের গভীর থেকে গভীরে। ৪৬ বছর আগে উৎক্ষেপণ করা এই নভোযানটি পেরিয়ে গেছে সৌরজগতের সীমানা। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব এখন ১২ শ কোটি মাইল, কিন্তু পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রয়েছে, নিয়মিত মহাকাশের দূর প্রান্তের খবর পাঠিয়ে চলেছে পৃথিবীতে।
সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল।
কিন্তু গত বছর ভয়েজারের সিগন্যালে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, কিছু ভুল তথ্য পাঠিয়েছে ভয়েজার ১। ভয়েজার ১-কে নিয়ন্ত্রণ করছে এর সঙ্গে সংযুক্ত অ্যাটিটিউড আর্টিকুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বা এএসিএস। এই সিস্টেম থেকেই ভুল তথ্য পাঠানো হচ্ছিল।
কিন্তু কেন এমন ভুল তথ্য আসছে, নাসার বিজ্ঞানীদের প্রথমে অবাক হতে হয়েছিল ব্যাপারটা ভেবে। পরে তাঁরা অনুসন্ধানে নামেন। শেষে দেখেন, ভুল তথ্যের জন্য দায়ী একটা অকেজো কম্পিউটার, যেটার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। নষ্ট সেই কম্পিউটারই এএসিএসের ডাটাকে বিকৃত করে দিচ্ছিল।
এতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হচ্ছিল, ভয়েজার ১-এর ভেতরকার খবর পাচ্ছিলেন না বিজ্ঞানীরা।
সুতরাং সমস্যা সমাধানে নামেন তাঁরা। বেশ কিছুদিন সময় চলে যায়। অবশেষে তাঁরা নিশ্চিত হন, সিস্টেমের একটা সফটওয়্যার আপডেট করতে পারলে সমস্যাটা মিটে যাবে। অবশেষে তারা ২০ অক্টোবর সফটওয়্যারটি আপডেট করেন।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগে ২০ ঘণ্টা, ১২ কোটি মাইল দূরের কোনো যন্ত্রে সফটওয়্যার আপডেট তো আর এক মুহূর্তেই করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে মহাকাশে দুটি নভোযান পাঠায় মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা। ভয়েজার ১ ও ২। উদ্দেশ্য বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা। পরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নিশ্চিত হন, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে সৌরজগতের দুই দূরবর্তী গ্রহ ইউরেনাস ও নেপচুনেও এই নভোযান দুটিকে পাঠানো সম্ভব। পরে প্লুটোকেও লক্ষ্য হিসেবে যুক্ত করা হয় ওই অভিযানে। ভয়েজার ১ ও ২-এর জন্য দুটি পথ নির্বাচন করা হয়েছিল। একটি ছিল বৃহস্পতি-শনি-প্লুটো। অন্য পথটা ছিল বৃহস্পতি-ইউরেনাস-নেপচুন।
ভয়েজার ২-কে আগে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্টে। আগের পথ একটু পরিবর্তন করে সাজানো হয় নতুন পথ। বৃহস্পতি-শনি-ইউরেনাস-নেপচুন। ভয়েজার ২ সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর পর ভয়েজার ১-কে উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নেন নাসার বিজ্ঞানীর। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর একে উৎক্ষেপণ করা হয়।
ভয়েজার ১ আকারে বেশ ছোট। গতিও ভয়েজার ২-এর তুলনায় বেশি। ফলে দ্রুত বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহকে অতিক্রম করে সেটা। অন্যদিকে সৌরজগতের বাইরের জগৎ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছিল পায়োনিয়ার ১০; ভয়েজার ১-এর আগেই। উচ্চগতির কারণে ১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পায়োনিয়ার ১০-কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় ভয়েজার ১।
২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, ভয়েজার ১ সৌরজগতের সীমানা অতিক্রম করে অসীম মহাবিশ্বের দিকে পা বাড়ায়। উৎক্ষেপণের ৪৬ বছর পর এখনো চলছে তার পথচলা। এর মধ্যে পাড়ি দিয়েছে ১২ শ কোটি মাইল পথ। তবু এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে এখন এর সময় লাগছে ২০ ঘণ্টারও বেশি। ভয়েজার ১-এর লক্ষ্য এখন মহাবিশ্বের অজানা জগতে পাড়ি জমানো।
ভয়েজার ১ চলে পারমাণবিক শক্তিতে। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কত দিন ভয়েজার ১ টিকে থাকবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না তাঁদের। আধুনিক প্রযুক্তির ছিটেফোঁটাও ছিল না এতে। একে চালাচ্ছে মাত্র ৬৮ কিলোবাইট মেমরির কম্পিউটার। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এখনো বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভয়েজার ১।
সূত্র : স্পেস ডট কম ও নাসা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।