আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আজ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে হাসপাতালের কর্মীরা জন্মের পরপরই মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা গঞ্জালেজের ছেলেকে তাঁর কোল থেকে তুলে নেয় এবং পরে তাঁকে জানায়, ছেলেটি মারা গেছে। সম্প্রতি সেই ছেলে চিলির চিলির ভালদিভিয়াতে তাঁর মাকে খুঁজে পেয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ৪২ বছর আগে হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে যাওয়া সেই ছেলেটির নাম জিমি লিপার্ট থাইডেন। তিনি তাঁর মাকে ফিরে পাওয়ার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা।
জিমি লিপার্ট তাঁর মাকে খুঁজে বের করার অভিযান শুরু করেছিলেন গত এপ্রিলে। তখন তিনি সংবাদপত্রে একটি খবর পড়ে জানতে পারেন, চিলির অলাভজনক সংস্থা নস বুসকামোসের সহায়তায় অনেকেই তাঁদের হারিয়ে যাওয়া পরিবার ও আত্মীয়দের খুঁজে পেয়েছেন।
এরপর তিনি সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নস বুসকামোস জানিয়েছে, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, জিমির জন্ম হয়েছিল চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর একটি হাসপাতালে। কিন্তু জন্মের পর তাঁর মাকে বলা হয়েছিল, ছেলেটি (জিমি) বেঁচে নেই। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
জিমি লিপার্ট থাইডেন এখন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশবার্নে। কারণ জন্মের পরপরই তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল একটি মার্কিন পরিবারের কাছে, যদিও সেই পরিবার তাকে দত্তক হিসেবে নিয়েছিল।
ভার্জিনিয়া থেকে ভিডিও কলে জিমি এপিকে বলেন, আমাকে দত্তক নেওয়ার কাগজপত্র থেকে জানতাম, আমার কোনো আত্মীয় স্বজন জীবিত নেই। কিন্তু কয়েক মাস আগে একটি গোপন সূত্র থেকে জানতে পারি, আমার মা আছেন। এ ছাড়া আমার চারজন ভাই ও একটি বোন আছে।
নোস বুসকামোস জানিয়েছে, তারা পুলিশর একটি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে, ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের দিকে চিলির বিভিন্ন পরিবার থেকে কয়েক হাজার শিশু অন্য দেশে চলে গেছে এবং তারা আর কখনোই ফিরে আসেনি।
নোস বুসকামোসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কনস্টানজা দেল রিও বলেন, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ওই শিশুরা চুরি হয়ে গেছে, যা তাদের মায়েরা জানতেন না।
দেল রিও আরও বলেন, গত ৯ বছরে আমরা এ রকম দত্তক নেওয়া ৪৫০ জনকে তাদের পরিবারের কাছে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করেছি।
নোস বুসকামোস ছাড়াও এ ধরনের কাজ করে থাকে চিলির হিজোস ওয়াই মাদ্রেস দেল সিলেনসিও এবং যুক্তরাষ্ট্রে কানেক্টিং রুটস নামের অলাভজনক সংস্থা।
নোস বুসকামোস জানিয়েছে, তারা মাইহেরিটেজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করে থাকে। জিমি লিপার্ট থাইডেনের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গেছে, তিনি শতভাগ চিলির নাগিরক। তাঁর চাচাত ভাইদের সঙ্গে তাঁর ডিএনএ মিলে গেছে, যারা মাই হেরিটেজ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন।
জিমি থাইডেন বলেন, তিনি তাঁর চাচাত ভাইকে তাঁর দত্তক নেওয়ার কাগজপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর জন্মদাতা মায়ের নাম ‘মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা গঞ্জালেজ’ লেখা ছিল ঠিকানা লেখা ছিল।
এরপরই মূলত মাকে খুঁজে পাওয়ার পথ খুলে যায় জিমি থাইডেনের। তিনি বলেন, এরপর আমি আমার স্ত্রী জোহানা এবং দুই কন্যাসহ চিলিতে যাই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে।
মা মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা গঞ্জালেজ ছেলেকে সাড়ম্বরে গ্রহণ করতে ৪২টি রঙিন বেলুন দিতে বাড়ি সাজান। সেই দৃশ্য দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জিমি। তিনি বলেন, আমি কোনোদিন আমার মাকে খুঁজে পাব, তা কল্পনাও করিনি।
মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা বলেন, আমি আমার ছেলের জন্য কত বিনিদ্র রজনী যে কেঁদেছি। কত সমুদ্র অশ্রু ঝরিয়েছি, তা কেবল আমি জানি।
জিমি থাইডেন জানান, জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে তাঁর দত্তক পিতামাতা কোনো আপত্তি করেননি। তারা নিজের অজান্তেই একটি অবৈধ দত্তক চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। তারা জানতেন না যে জিমিকে চুরি করে তাদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।