জুমবাংলা ডেস্ক : এ যেন ফ্যাশন শোর মঞ্চ। চারদিকে গ্যালারি। রঙিন আলোর ঝলকানি। সুরের মূর্ছনা। ক্যামেরা প্রস্তুত। মঞ্চের চারপাশে হাজারো দর্শক। প্রত্যেকের চোখে বিস্ময়। উচ্ছ্বাস উপচে পড়ছে। কিন্তু এই বিস্ময় বা উচ্ছ্বাস কোনো তারকার জন্য নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী র্যাম্প শো। যেখানে মডেল হয়ে হেঁটেছে সুসজ্জিত গরু, উট, দুম্বা, কুকুর, ছাগল, মুরগিসহ শত প্রজাতির প্রাণী।
সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাঠজুড়ে দেখা গেছে ব্রাহামা, জার্সি, শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ান, মিরকাদিমসহ নানা জাতের গরু। এ ছাড়া তিন হাজারেরও বেশি পশুপাখি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় এসেছেন খামারিরা। কোরবানির আগে বেচা-বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
সন্ধ্যায় র্যাম্পের মঞ্চে খামারিরা তাদের গরু নিয়ে একে একে প্রবেশ করেন। এর পর মিউজিকের তালে তালে নানা জাতের পশুকে র্যাম্পে হাঁটানো হয়। এ সময় পশুর মালিকরা পশুর জাত, বয়স এবং দাম উপস্থিত সবাইকে জানান। শো শেষে তারা পশু নিজ নিজ স্টলে নিয়ে যান।
র্যাম্প শোর প্রধান আকর্ষণ ছিল সাদিক এগ্রোর উট। তাদের ব্রাহামা জাতের এক কোটি টাকার আরেকটি গরুও কাঁপিয়েছে মেলার মাঠ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নাহার এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু ঘিরেও দর্শকদের বেশ আগ্রহ ছিল। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের এক খামারেই ১৭শ গরু আছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের উচ্চশিক্ষিত যুবক সজল র্যাম্পে হাঁটিয়েছেন ১০টি বিদেশি জাতের কুকুর। দর্শকদের শোনান কুকুর পালনের গল্প। ভৈরবের চন্ডিবেরের ফোসাহাত রাব্বী সজলের শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঢাকার গুলশানে। পড়াশোনা করেছেন ক্যান্টনমেন্টের শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে স্নাতকোত্তর করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে ফিরে গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন কুকুরের খামার। সেই খামারে বর্তমানে বছরে উৎপাদিত হয় ২০-২৫টি কুকুর। দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যতিক্রমী এ খামার করে তিনি বেশ লাভবান।
তাঁর আইকন বাংলা খামারে দেশি সরাইল, জার্মান শেফার্ড, ডোবারম্যান, কাউকেশান শেফার্ড, সাইবেরিয়ান হুস্কি, ফরাসি মাস্তিফ, গ্রেড ডান, বাল মাস্তিফ, সেইন্ট বেনার্ড, ক্যান কর্স, ব্রিটিশ বুলডগসহ নানা প্রজাতির কুকুর প্রজনন হচ্ছে। আর এসব তিনি সুলভ মূল্যে বিক্রি করছেন।
ফোসাহাত রাব্বী জানান, ছোট বয়স থেকে কুকুরপ্রীতি থাকলেও শখের সেই নেশা একদিন পেশায় রূপ নেয়। তিনি জন্মের পর থেকেই তাদের পরিবারে কুকুরের লালনপালন দেখেছেন। তাদের ঢাকার বাসায় দেশি-বিদেশি প্রজাতির ৩-৪টি কুকুর সব সময়ই থাকত। ফলে শিশুকাল থেকেই কুকুরের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কুকুর লালনপালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।
র্যাম্প শো চলে গভীর রাত পর্যন্ত। দুই শতাধিক আকর্ষণীয় পশুর র্যাম্পে হাঁটা দেখতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু।
মিরপুর থেকে স্বামী ও ১০ বছরের কন্যাসন্তান নিয়ে মেলায় এসেছিলেন আফরোজা খাতুন। তিনি বলেন, অনেক গরু দেখলাম। আমার মেয়ে এনজয় করেছে। এত গরু এর আগে দেখিনি। এ ছাড়া গরু যে এত বড় হয়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
গুলশান থেকে আসা শাম্মী আক্তার নামের আরেক দর্শনাথী বলেন, অনেক কৌতূহল নিয়ে মেলায় এসেছি। ভালো লেগেছে। গেটের বাঁ-পাশে উট, ডানে বড় বড় গরু। সব রকম প্রাণীই এখানে আছে, যেগুলো কখনও দেখিনি। অনেক ‘এক্সাইটেড’ আমি! বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছি। তারাও খুব খুশি।
মেলায় আসা ধানমন্ডির বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন বলেন, গরুর খামার করার ইচ্ছে আছে। এখানে বিভিন্ন জাতের গরুর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে।
প্রথম দিনে যে সাড়া মিলেছে, তাতে খুশি আয়োজকরা। ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আলী আজম রহমান শিবলী বলেন, এ মেলার মাধ্যমে একটি ফার্মের সঙ্গে আরেকটি ফার্মের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা সম্ভব হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালনপালনের অভিজ্ঞতা ও তথ্যউপাত্ত তুলে ধরা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে পশু পালন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি পশুকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোটাতাজা করার উপায় জানানো হচ্ছে।
সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, এবারের মেলায় আমাদের অর্জন অনেক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনেছেন। তিনি আমাদের সমস্যা দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় খামারিদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সারাদেশের খামারিরা নতুনভাবে উজ্জীবিত।
মেলা চলবে আজ শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।