জুমবাংলা ডেস্ক : শুক্রবার ভোর ৬টায় বেরিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সারা দিনের নির্বাচনী প্রচার-জনসংযোগ শেষে যখন শহরের সাহাপাড়ায় নিজ বাড়িতে ফিরলেন, তখন রাত ১২টা। তখনো তাঁর একটা কাজ বাকি। ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন সাংবাদিক তাঁর অপেক্ষায়। এই গভীর রাতেও আপনার যে প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে…। শুনেই একটু হাসলেন সাকিব। বললেন, ‘নাহ, চোখে ঘুম আছে।’ কিন্তু পারছেন কীভাবে, জানতে চাইলে সাকিবের জবাব, ‘এগুলো আমার জন্য নতুন কিছু না। ক্রিকেট, শুটিং, ট্রাভেলিং—এসবে ব্যস্ত সময় কেটেছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন ওগুলোতে বিশ্রামের অনেক সময় ছিল। এখানে একটা পার্থক্য হচ্ছে, কোনো বিশ্রাম নেই, ননস্টপ ছোটাছুটি। আর মানুষের সঙ্গে অনেক মিশতে হয়। ওখানে যেমন অনেক চুপচাপ থাকা যায়, এখানে সে সুযোগ একেবারেই নেই।’
মাগুরা শহরে ঢুকেই মনে হয়, সাকিব এখন আক্ষরিক অর্থেই ‘পোস্টার বয়’! তাঁর পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর। তাঁর নামে স্লোগান, প্রচার, জনসভা, পথসভায় ভাষণ—এসব দৃশ্যে একটু অন্যরকম লাগে, বিশেষ করে যাঁরা লম্বা সময় তাঁর ক্রিকেটশৈলী দেখে অভ্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কেশবমোড়ে নির্বাচনী প্রচার অফিসে গিয়ে দেখা গেল, দরিদ্র কয়েকজন সাহায্য-সহযোগিতা চাইছেন সাকিবের কাছে। তাতে তিনি একটু বিব্রতও হন। একবার হেসে বলেই দিলেন, ‘আমি তো সাধারণত পকেটে টাকা নিয়ে ঘুরি না। কিন্তু এখন থেকে পকেটে টাকাও রাখতে হবে।’
এ রকম নিজের আরও অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে সাকিবকে। ক্রিকেটের বিশ্বসেরা যে অলরাউন্ডার নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন, সেই দূর আকাশের তারা সাকিব এখন নিজ থেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে, মানুষকে বুকে টেনে নিচ্ছেন হাসিমুখে। সাকিবের দাবি, মানুষের সঙ্গে তাঁর মেশার সহজাত ক্ষমতা আগে থেকেই ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা আমি এমনই ছিলাম। ক্রিকেটের কারণে ওভাবে চলার সুযোগ হয়নি। আমার বন্ধুরা যারা আমাকে চেনে, কেউ বলবে না আমি অন্যরকম ছিলাম। ক্রিকেট এমন একটা পেশা, মানুষের সঙ্গে সেভাবে মেশার সুযোগ ছিল না। কিংবা আমি ওরকম চাইওনি। পেশাগত কারণেই মনে হয়েছে, ওটাই সেরা উপায়। সে কারণে ওভাবে মিশিনি বা দরকার পড়েনি। জনপ্রতিনিধি হতে হলে তো জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে, সাহস দিতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে। আমি সে সবই করার চেষ্টা করছি।’
দুদিন কাছাকাছি থেকে দেখা গেল, সাকিবকে পেলেই সেলফি-ছবি তোলার হিড়িক পড়ছে। ব্যাট, জার্সিতে সই শিকারের পাল্লা চলছে। তাঁকেও নিতে হচ্ছে সেলিব্রেটি থেকে জননেতা হওয়ার চ্যালেঞ্জটা। সাকিব এই বিষয়টি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন। তিনি বললেন, ‘সেলিব্রেটি কিংবা রাজনীতিবিদের তকমা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করতে পারা, বিশেষ করে মাগুরাবাসীর জন্য। কিছু করতে পারলে নিজের মধ্যে একটা তৃপ্তি কাজ করবে।’
মাগুরা-১ আসনে এখনো দেয়ালে দেয়ালে সাইফুজ্জামান শিখরের নাম জ্বলজ্বল করছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ও মাগুরার রাজনীতির দীর্ঘ সময়ের এই নিয়ন্ত্রককে পেছনে ফেলে এবার প্রার্থী হয়েছেন সাকিব। গত দুদিনে শহরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিখর ও তাঁর অনুসারীরা সাকিবের বিরোধিতা না করলেও তাঁরা সহাস্যে দ্রুত সব মেনে নিয়েছেন, এটিও ভাবা কঠিন। এটা ঠিক, জেলার বর্ষীয়ান রাজনীতিকেরা বিভিন্ন জনসভায় উপস্থিত থাকছেন কিংবা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সাকিব এখানে-সেখানে ছুটছেন মূলত কাছের বন্ধুবান্ধব নিয়ে, যাঁদের বেশির ভাগেরই নির্বাচন দূরে থাক, রাজনীতি করারই অভিজ্ঞতা নেই।
সাকিব বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন ক্রিকেটীয় ভাষায়ই, ‘প্রথমে যখন কোনো দলে ঢুকবেন, কখনোই সহজ হবে না। সব সময় চ্যালেঞ্জিং হবে। এখানে নতুন একটা টিমে ঢুকেছি, আমার জন্যও সহজ হবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নাম-যশ-অর্থ-বিত্ত সবই পেয়েছেন। জীবনে অপূর্ণতা বলে কিছুই নেই সাকিবের। তবু রাজনীতির জটিল খেলায় কেন আসতে হলো? কখন রাজনীতি করার চিন্তা এল মাথায়? কে অনুপ্রাণিত করেছে রাজনীতিতে? প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশ গুছিয়ে দিলেন সাকিব, ‘খুব সম্ভব ২০১৮ সালে প্রথম ভাবনাটা আসে মাথায়। যদি বড় ধরনের পরিবর্তন চান, রাজনীতি ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। আপনি হয়তো ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন, চিকিৎসক হিসেবে অনেকের চিকিৎসা করতে পারবেন, কিন্তু আপনি যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন, পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা বদলে দিতে পারবেন। এ ধরনের পরিবর্তন আসলে অন্য কোনো মাধ্যম দিয়ে করতে পারবেন না। সে কারণে মনে হয়েছে, এটা একটা অপশন। আমি বলার চেয়ে করায় বেশি প্রাধান্য দিই। সে কারণে ভাবলাম, কেন নয়? যদি আমি রাজনীতিতে গিয়ে ভালো কিছু করতে পারি। ওই উদ্দেশেই আসলে আসা।’
একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় রাজনীতির মাঠে কতটা সফল হন, সে উত্তর সময়ের হাতেই তোলা থাক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।