বিনোদন ডেস্ক : ‘যেকোনো প্রাপ্তিই অনেক আনন্দের। তবে যে রাষ্ট্রে বাস করি, সেই রাষ্ট্র যদি কোনো স্বীকৃতি দেয়, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি এভাবেই ব্যক্ত করলেন অভিনেতা জাহিদ হাসান।
নাটক ও চলচ্চিত্র—দুই মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় জাহিদ হাসান। এই অভিনেতাকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের জাহিদ হাসান হয়ে উঠতে হয়েছে। অভিনয়ের শুরুটা সহজ ছিল না তাঁর। অনেক ঘাত–প্রতিঘাত পেরিয়ে একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। মঞ্চে অভিনয়ের জন্য প্রথম ঢাকায় এসে পরিচিত অনেকের সহায়তা পাননি তিনি। তারপরও থেমে থাকেননি। শুরুর সেই স্মৃতি এখন তাঁর অনুপ্রেরণা। তিক্ত সেসব অভিজ্ঞতার জন্য কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জাহিদ হাসানের।
তখনকার স্মৃতিচারণা করে এ অভিনেতা বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে যাঁরা অভিনয় শেখাতে যেতেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করি। থিয়েটারে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানাই। তাঁরা বললেন, “আমরা জুনিয়র ছেলেদের নিই না।” মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। ধীরে ধীরে আবারও কাজ শুরু করি। একটাই চিন্তা ছিল, ভালো করতে হবে। একসময় ভালো করতে থাকলাম। তখন তাঁরাই আবার এসে বলা শুরু করলেন, “জাহিদ তো আমার আত্মীয়, ওর সঙ্গে তো আমার সিরাজগঞ্জ থেকে পরিচয়।”’
ঢাকার নাট্যদলে যুক্ত হওয়ার পর নিয়মিত অনুশীলনে আসতেন জাহিদ হাসান। অনেকে তখন ব্র্যান্ডের দামি পোশাক পরে আসতেন। কিন্তু এই অভিনেতার কোনো ট্র্যাকস্যুট, ট্রাউজার বা ভালো পোশাক ছিল না। ছিল শুধু একটা সাধারণ প্যান্ট। সেই প্যান্টেও হাঁটুর কাছে ছেঁড়া ছিল। সেভাবেই মহড়ায় যেতেন এই অভিনেতা।
তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করেন, ‘আমি একটা সাধারণ গেঞ্জি আর সাধারণ ছেঁড়া প্যান্ট পরে রিহার্সেলে আসতাম। মাঝেমধ্যে বড় টিচাররা এসে অভিনয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেকচার দিতেন। সেগুলো লেখার জন্য সবাই বড় বড় ডায়েরি নিয়ে আসত। অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে নোট করে রাখত।
লেখার জন্য আমার কাছে থাকত খাতার একটা পেজ আর কলম। সেই এক পেজে আমার লেখা হতো না। তাই অল্প জরুরি কথা শব্দে টুকে রাখতাম। নিজেকে বোঝাতাম অভিনয় তো আর থিওরিটিক্যাল না, এটা প্র্যাকটিক্যাল। অভিনয় বোধের বিষয়।’
বেশভূষা দেখে অনেকেই জাহিদ হাসানকে সেভাবে মূল্যায়ন করতেন না। তিনি জানান, যাঁরা থিয়েটারে মোটরসাইকেল, বেবি ট্যাক্সি নিয়ে আসতেন, তাঁদের সমীহের চোখে দেখা হতো। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা অতি সাধারণভাবে আসতাম, তাদের নিচু চোখে দেখা হতো। তখন মনে কষ্ট পেতাম। অথচ শেখ সাদি কিন্তু বলে গেছেন, পোশাকেই মানুষের পরিচয় নয়। তারপরও মানুষ মানুষকে পোশাক দেখে মূল্যায়ন করে। কিন্তু মানুষের ভেতরে কী আছে, তার মূল্যায়ন এখনো খুব কমই হয়।’
নিয়মিত খল চরিত্র করবেন কি না, জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি অভিনয় করতে পছন্দ করি। কমেডি, সিরিয়াস, খল যেকোনো চরিত্র করতে চাই। কিন্তু চরিত্রে গুরুত্ব থাকতে হবে।’ তিনি জানান, যে চরিত্রগুলো খল হলেও আগেই বোঝা যায় না, সেই চরিত্রগুলো তাঁর অনেক পছন্দের।
‘সাপলুডু’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাহিদ হাসান ২০১৯ সালে সেরা খল চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছেন। ছবিটি পরিচালনা করেছেন গোলাম সোহরাব দোদুল। এটি তাঁর তৃতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এর আগে তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় ‘হালদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৭ সালে একই ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পান। সেরা অভিনেতা হিসেবে ১৯৯৯ সালে প্রথম এই পুরস্কারের স্পর্শ পান জাহিদ হাসান। এ ছাড়া আটবার মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন এই অভিনেতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।