সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পলায়নের পর থেকেই দলীয় নেতা কর্মীদের মতই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের (সদর হাসপাতাল) তত্ত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা ও দাপ্তরিক কাজ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সাথে সাথেই সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যান ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন তড়িঘড়ি করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালানোর সময় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। হামলায় সরকারি এ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুরের শিকার হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বাহাউদ্দিন। ছুটি না নিয়ে পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞাত স্থানে থেকেই এখনো হাসপাতালটির নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবি করে একটি সূত্র।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার ডা: মো: বদরুল আলম চৌধুরী।
হাসপাতালটির একাধিক কমকর্তা-কর্মচারী ও স্টাফ নার্সরা জানান, ডা: বাহাউদ্দীনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। সে সমবসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার নাম ভাংগিয়ে হাসপাতালে ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছেন। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের সাথে জঘন্য খারাপ আচরণ করতেন। চাকরি থেকে সরানোর ভয় দেখিয়ে সবাইকে চাপে রাখতেন। হাসপাতালের ভেতরে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব গুন্ডাবাহিনী। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতেন না তিনি। অনিয়ম করাই যেন তার নিয়ম ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে বেনামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বদরুল আলম চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক) বলেন, তত্ত্বাবধায়ক না থাকায় সবাই আমাকে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন । দাপ্তরিক যে কাজগুলো আমার পক্ষে করা সম্ভব, আমি সেগুলো করে যাচ্ছি। ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি প্রথমে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলেন। পরে আরো এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছেন। ছুটির আবেদন বা কাগজপত্র দেখতে চাইলে এই প্রতিবেদককে সেটি দেখাতে ব্যর্থ হন ডা. বদরুল আলম। এ সময় বর্তমান পরিস্থিতিতে নিউজ না করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন তিনি। ডা: বাহাউদ্দিনের ছুটির কাগজটি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে আছে বলে তিনি জানান। তবে মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যারের ছুটির কাগজ আমার কাছে নেই। হয়তো বদরুল আলম স্যারের কাছে আছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দুই সপ্তাহের ছুটিতে আছি। আমার অফিসে ছুটির কাগজপত্র দেয়া আছে। সুস্থ হলেই কর্মস্থলে ফিরবো। আমার ছুটির বিষয়ে সিভিল সার্জনও জানে। আর এ্যাম্বুলেন্সে কারা হামলা করেছে সেটি জানা নেই, সেদিন তো অনেক লোকই ছিল, হামলার সাথে কারা জড়িত ছিল সেটা এক্সাক্টলি বলতে পারবো না। তবে হামলায় আমার ড্রাইভার কিছুটা আহত হয়, এরমধ্যে সে সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করেছে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক আসিফুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্ট বিকেল চারটার দিকে বাহাউদ্দিন স্যার আমাকে ফোন দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসতে বলে। কিন্ত কোথায় যাবে সেটা জানায়নি। তড়িঘরি তড়িঘড়ি করে যাওয়ার সময় কিছু লোক আমাদের উপর হামলা করে। এরপর বাহাউদ্দিন স্যার হাসপাতালে আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেন, তত্ত্বাবধায়কের ছুটি দেয়ার অথরিটি আমি না, উনার অথরিটি ঢাকা বিভাগীয় ডিরেক্টর স্যার। ৫-৬ দিন আগে ডাক্তার বাহাউদ্দিন আমাকে ফোনে জানিয়েছিল সে ছুটিতে আছেন। কিন্ত তিনি কবে ছুটি নিয়েছেন বা কত দিনের ছুটি নিয়েছেন সেটা আমার জানা নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।