বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বৈশ্বিক তাপপ্রবাহ ক্রমশই দীর্ঘ ও নির্মম হয়ে উঠছে, যেখানে এক সময় এয়ার কন্ডিশনার বা এসি’র মতো যন্ত্রও কাজ করা বন্ধ করে দেবে, এমন ঝুঁকি রয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আইডা’ আঘাত হেনেছিল, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল বিপজ্জনক বন্যা। এতে করে সে সময় ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
এর পর থেকেই সেখানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়, যেখানে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল ৩২ ডিগ্রি সেলশিয়াসের ওপর। সে সময় বাসাবাড়িতে থাকা লোকজন এই তাপ থেকে বাঁচতে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতে চাইলেও বিদ্যুৎ ছিল না তখন।
এটিই ছিল লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক তাপপ্রবাহের ঘটনা, যা ওই সময়ে শহরটির ১৪টি মৃত্যুর মধ্যে অন্তত নয়টির জন্য দায়ী।
তাপপ্রবাহ ও দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ না থাকায় শহরের লোকজনের কাছে এ হারিকেনটি এক দুঃস্বপ্নের দৃশ্য হিসেবে বিবেচিত। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে মানুষের ভূমিকা এ ধরনের বিধ্বংসী আবহাওয়া সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগায়, যা প্রতিনিয়তই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে। এতে করে তাপপ্রবাহের বিপরীতে মানুষের সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থাৎ এয়ার কন্ডিশনিংয়ের দুর্বলতা নিয়েও একটি অস্বস্তিকর সত্য প্রকাশ প্রকাশ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
এয়ার কন্ডিশনার প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি নিখুঁত হয়ে উঠতে পারেনি। আর এতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার বেশিরভাগই আসে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখা জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে। এর মানে, যে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে এসি তৈরি হয়েছিল, তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এটি। আর এটি স্রেফ তাদের জন্যই সহজলভ্য, যাদের এটি কেনার সামর্থ্য আছে। এর ফলে, সামাজিক বৈষম্যও আরও বাড়ছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও আয় বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে, ২০৫০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে এসি’র চাহিদা বেড়ে যেতে পারে তিনগুণ পর্যন্ত।
তবে সমস্যা হল, বিদ্যুৎ ছাড়া এসি চলে না। পাশাপাশি, চরম আবহাওয়ার মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়ে যাওয়া ও এসির বাড়তে থাকা চাহিদা পূরণের মতো যথেষ্ট পরিমাণ বৈদ্যুতিক গ্রিডের সংকটও আছে।
অলাভজনক গবেষণা সংগঠন ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গোটা যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য দায়ী আবহাওয়া।
“আবহাওয়ার প্রতিটি দিকই এরইমধ্যে দুর্বল বিভিন্ন গ্রিডে আঘাত হানছে ও এর পরীক্ষা নিচ্ছে”, বলেন ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’-এর জ্যেষ্ঠ ডেটা বিশ্লেষক জেন ব্র্যাডি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, পুরনো হতে থাকা গ্রিডগুলো নকশা করা হয়েছিল ‘অতীতের আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে,’ বলেন অস্টিন শহরে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’-এর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল ওয়েবার।
মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খেতেন তিনি, মৃত্যুর পর অ্যাকাউন্টে মেলে কোটি কোটি টাকা
এ সমস্যা নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ভুগছে, বিষয়টি এমন নয়। জুনে দক্ষিণ ইউরোপের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলশিয়াসে পৌঁছে যাওয়ার পর আলবেনিয়া, বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও মন্টিনেগ্রো’র কিছু অংশে কয়েক ঘণ্টা দীর্ঘ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা দেখা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।