জুমবাংলা ডেস্ক : মুখে কোমল দাড়ি গোঁফ। পরনে কালো গোল গলার টি-শার্ট আর ধূসর ট্রাউজার্স। পায়ে ধূলিধূসরিত স্নিকার্স। দুটো হাত দেহের সঙ্গে সমান্তরালে আড়াআড়ি ছড়ানো। ডান হাতে একটা বাঁশের লাঠি নিয়ে পলিশের বুলেটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা সাহসী সেই ছেলেটিই ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল সে। একসাথে কত যে চলাফেরা ছিল আমাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তিন নাম্বার গেটের বিপরীতে বর্তমান আবু সাঈদ চত্বরের পাশেই একটা মেসে থেকে পড়াশুনা চালিয়েছে আবু সাঈদ। পপি ছাত্রাবাস নামের সেই মেসটির ছোট্ট একটা রুমে থাকতো দুইজন। ভাড়া ছিল মাত্র ৭০০ টাকা। সেই দুইজনের একজন ছিল আবু সাঈদ। মেসের মিল খরচ কখনো বকেয়া রাখতো সে। তাঁর ব্যবহারের জিনিসপত্রগুলো এখনো আগের মতই রয়ে গেছে পপি ছাত্রাবাসে। নেই শুধু আবু সাঈদ। তাঁর হাতের লেখা আন্দোলনের ব্যানার ফেস্টুন, খাতা, পড়ার বইগুলো এখনো টেবিলে উপরে রয়েছে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও মেধাবী হওয়ায় পড়াশুনার খরচ জোগাতে কখনো হিমশিম খেতে হয়নি তাঁকে। টিউশনি করে নিজে চলার মতো এবং বাড়িতে সামান্য সহযোগিতা করার মতো আয় হতো। মেসের বন্ধুদেরকেও মাঝে মাঝে ধার দিয়ে সহায়তা করতো আবু সাঈদ। মেসের সবাই তাঁকে বলতো জ্ঞান পিপাসু যোদ্ধা। তাঁর টার্গেট ছিল সব উত্স থেকে সব ধরনের জ্ঞান আহরণ করা। মেধাশক্তি ছিল খুবই তীক্ষ্ম। মেসে তাঁকে ‘গুগল স্কলার’ নামে ডাকতো সবাই। সময় পেলেই ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত সে।
আবু সাঈদ একজন সরল হাস্যোজ্জ্বল নক্ষত্র ছিল। তাঁর মাঝে ছিল না কোনো হিংসা বিদ্বেষ। অন্যায়ের সঙ্গে সে কোনোদিন আপোষ করেনি। যেখানে অন্যায় সেখানেই আবু সাঈদ এর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ভেসে উঠতো। কখনো মিথ্যা বলতো না এবং মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করতো না। সেটা হোক মজার ছলেও। আমরা সহপাঠীরা তাঁকে খুব মিস করি। একজন বীর শহীদ হিসেবে আমাদের হৃদয়ে আবু সাঈদ বেঁচে থাকবে আজীবন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।