জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা এলাকায় একটি কারখানার ঝুটের মালামাল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারখানার সামনে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কারখানার সামনে থাকা ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং আশপাশের দোকানে ও বাড়িতে হামলা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজের বাড়ি কড্ডা এলাকায়। তারপরও অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে বাসন থানা এলাকার শেষ মাথায় অবস্থিত ম্যানাল ফ্যাশন থেকে গত কিছু দিন ধরে জোরপূর্বক ঝুট নামানোর চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় বিএনপি-যুবদলসহ এলাকাবাসী এতে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তানভীর সিরাজের লোকজন মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে কয়েকটি ট্রাক নিয়ে ঝুট নামাতে ওই কারখানায় যান। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএনপি-যুবদলের নেতারা বাধা দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৫টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আশপাশের দোকান ও বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ১৪ নং ওয়ার্ডস্থ ম্যানাল ফ্যাশন লিমিটেড নামক কারখানায় ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজের ছোট ভাই (সাবেক আওয়ামী নেতা) তছলিম সিরাজ ও তার অনুগত ওয়ার্ড বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী ওই কারখানার পরিত্যাক্ত মালামাল (ঝুট) আনতে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল হকের নেতৃত্বে ১৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি নাজমুল, সাধারণ সম্পাদক সারোয়ারসহ অন্যরা তাদের বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কারখানার সামনের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর ও পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়, পাশের কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে হামলা করা হয়।
এ বিষয়ে সাবেক গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল হক বলেন, আমি ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমি ঢাকায় ছিলাম। আমি ঘটনায় জড়িত না। তবে আমি শুনেছি, বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজের পক্ষে ১৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতাউরের নেতৃত্বে অর্ধশত লোক ওই কারখানার ঝুট নেওয়ার সময় বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। পরে স্থানীয় লোকজন ও যুবদলের নেতারা যারা আগে থেকে ওই কারখানার ঝুট নিতেন তারা জানতে পেরে বাধা দেন। এ সময় তানভীরের লোকজন ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরে উত্তেজিত জনতা কারখানার আশপাশে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদদের সভাপতি নাজমুল হোসেন জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে মাল দেবেন বলে বেশ কিছু দিন ধরে কথা বলছেন। এর ভেতর বাসন থানা সভাপতি তানভীর সিরাজ তার লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক ঝুট নামানোর চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী পাল্টা প্রতিরোধ করলে হামলা চালায়। তানভীর সিরাজের লোকজন বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্টের পর তানভীর সিরাজ ঝুট ব্যবসার নামে থানা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজের বক্তব্য নিতে একাধিকবার তার মোবাইলে কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপক হামিদুল হক মোস্তফা বলেন, আমাদের কারখানার ঝুট নেওয়ার জন্য কারো কোনো চুক্তি হয়নি। আজকে কারখানার বাইরে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটেছে।
গাজীপুর মহানগহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনি বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ ধরনের যে কোনো দখল-আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও কারও যদি এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার আহমেদ বলেন, কারখানার মালিক স্থানীয়দের ঝুটের মালামাল দিতে চান। কিন্তু বাসন থানা বিএনপির সভাপতি জোর করে মাল নিতে চান। এতে স্থানীয়রা ও বিএনপির-যুবদলের একটি অংশ তাদের বাধা দেন। উভয়পক্ষে উত্তেজনার পরে সেখানে ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।