আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ যুক্তরাজ্য। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো মানুষ কাজের আশায় যেতে চান দেশটিতে। তবে এই দেশটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী নেয় কৃষিখাতে মৌসুমী কর্মী হিসেবে।
মৌসুমী কর্মী হিসাবে ভিসা বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য দেয়া হয়ে থাকে৷ আর এই ভিসা নিয়ে যারা আসেন তাদেরকে সাধারণত অন্য কাজ করতে দেয়া হয় না৷ কাজ শুরুর আগে আগে তাদের ইউরোপে প্রবেশ করতে দেয়া হয় এবং কাজের মাসগুলো শেষে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
যদিও অন্য কাজ করতে দেয়া হয় না, তবে ইউরোপের কিছু দেশ মৌসুমি ভিসায় আসা কর্মীদেরকে পড়াশোনার বা প্রশিক্ষণের জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়৷
গ্রিসে মৌসুমী কর্মী হিসেবে আসতে চাইলে, যে বিষয়গুলো আপনার জানতে হবে-
কতদিন থাকতে পারবেন
*একজন কর্মী এই ভিসায় এসে কতোদিন দেশটিতে থাকতে পারবেন তা ভিসা এবং চাকরিদাতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷ তবে ভিসার মেয়াদকাল পর্যন্ত কাজ করতে পারার নিশ্চয়তা রয়েছে৷ কিন্তু অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হলে, বিষয়টি কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷
*প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শর্তপূরণ করা না হলে, আপনি যে দেশে কাজ করছেন সেই দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন৷ তবে এটি বিপজ্জনকও হতে পারে৷ কারণ, আপনি ওই দেশে ততক্ষণ থাকতে পারবেন, যতক্ষণ আপনি আপনার নিয়োগকর্তার জন্য কাজ করছেন।
*এমন পরিস্থিতিতে, আপনি যে খাতে কাজ করছেন, সেই খাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কোনো প্রতিনিধি বা মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে তারা আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন৷
ব্রিটেনে মৌসুমী কাজ
*যুক্তরাজ্য সরকার অভিবাসী কর্মীদের জন্য ফল, শাকসবজি বা ফুল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছয় মাসের অনুমতি দিয়ে মৌসুমী কাজের ভিসা দেয়।
*বড়দিনের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে পোলট্রিখাতে কাজের জন্য ২ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি বিশেষ ভিসা দেয়া হয়৷
*প্রতি বছর ১৫ নভেম্বরের পোলট্রি ভিসার আবেদন জমা দিতে হয়৷
*আপনি যেকোনো সময় অন্য যেকোনো মৌসুমি কর্মী ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
*ভিসা পেতে, আপনার একটি স্পনসরের (নিয়োগদাতা বা কর্মসংস্থান সংস্থা) প্রয়োজন হবে৷ যেখান থেকে আপনাকে আপনার ভিসা আবেদনে ব্যবহারের জন্য স্পনসরশিপ রেফারেন্স নম্বরের একটি চিঠি দেবেন৷
মানতে হবে যেসব শর্ত
*আপনার বয়স ১৮ এর বেশি হতে হবে।
*যুক্তরাজ্যে চলার জন্য আপনার অবশ্যই যথেষ্ট অর্থ থাকতে হবে। সাধারণত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে এক হাজার ২৭০ পাউন্ড সঞ্চয় থাকতে হবে৷ এই অর্থ আপনার ব্যাংক হিসাবে অন্তত ২৮ দিন ধরে থাকতে হবে৷ ভিসা আবেদনের সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিয়ে এর প্রমাণ দেখাতে হবে৷
*আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি থাকতে হবে, যা আপনার পরিচয় এবং জাতীয়তা নিশ্চিত করবে৷
*পাসপোর্ট ছাড়া আপনার অন্য কোনো নথি যদি ইংরেজি ভাষায় না থাকে তবে তা সত্যায়িত অনুবাদ করে জমা দিতে হবে৷
নিয়োগপ্রক্রিয়া
অনেক বড় কৃষি ব্যবসায়ী সরাসরি বিজ্ঞাপন দেয়, অন্যরা এজেন্ট ব্যবহার করে যারা যুক্তরাজ্য এবং আবেদনকারীর দেশে কাজ করে৷ যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বেরি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হলো হান্টার৷
বেরি তোলার ভালো সময় হলো জুন এবং জুলাই৷ কিন্তু প্রায়ই মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এবং কখনও কখনও বছরের শুরুতেও খামারের কাজ পাওয়া যায়।
আপনি যুক্তরাজ্যে যেদিন কাজ শুরু করবেন, তার তিন মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন৷ অনলাইনে আবেদন করার পর, আপনি মোটামুটি তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আশা করতে পারেন৷ ভিসা আবেদনে খরচ হয় ২৫৯ পাউন্ড৷
পরের বছর ফসল কাটার জন্য ভিসার সুবিধা থাকবে কিনা, তা ডিসেম্বরে ঘোষণা দেয়া হয়৷ অনেক খামার বছরের পর বছর ধরে একই কর্মীদের ওপর নির্ভর করে এবং প্রায়শই একই দেশ বা সংস্থা থেকে তাদের নিয়োগ করে৷
ভিসা দিয়ে আপনি কী করতে পারবেন এবং কী করতে পারবেন না
*একবার আপনার ভিসা হয়ে গেলে, আপনি শুধুমাত্র আপনার স্পনসরশিপের চিঠিতে উল্লেখিত চাকরিতে কাজ করতে পারবেন।
*আপনি পড়াশোনা করতে পারবেন৷
*আপনি কোনো স্থায়ী চাকরি বা এমন কোনো চাকরি নিতে পারবেন না, যা আপনার স্পনসরশিপের চিঠিতে উল্লেখ নেই।
*আপনি পাবলিক ফান্ডের জন্য যোগ্য হবেন না৷
* আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনতে পারবেন না।
শোষণ এবং আধুনিক দাসত্ব
ফার্মিং কমিউনিটি নেটওয়ার্ক ফার্মওয়েল-এর ওয়েবসাইটে মৌসুমী শ্রমিক এবং আধুনিক দাসত্ব সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রয়েছে। তারা অনুমান করে যে প্রতি বছর ১০ হাজার থেকে ১৩ হাজার মানুষ খাদ্য ও কৃষি শিল্পে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকতে পারেন৷
আপনি নির্যাতনের শিকার হলে পুলিশ, গ্যাংমাস্টারস অ্যান্ড লেবার অ্যাবিউজ অথরিটি (জিএলএএ) বা মডার্ন স্লেভারি হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন৷ নম্বরটি হলো: ০৮০০০১২১৭০০৷
নিজের অধিকার সম্পর্কে জানুন
ব্রিটেনের পাবলিক সার্ভিস ইউনিয়ন ইউনিসন-এর ওয়েবসাইটটি যুক্তরাজ্যে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। আপনি ইউনিসনকে সরাসরি ০৮০০০৮৫৭৮৫৭ নম্বরে কল করতে পারেন।
যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে কাজ করার জন্য, সব অভিবাসী কর্মীদের একটি জাতীয় বিমা নম্বরের জন্য নিবন্ধন করতে হবে।
আপনি অন্য সব কর্মীদের মতো একই কর্মসংস্থান আইন দ্বারা সুরক্ষিত। একই কাজ করা ব্রিটিশ শ্রমিকদের সমান বেতন আপনার পাওয়া উচিত। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা আছে এবং সব নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই তা দিতে হবে। প্রতি ঘন্টার পরিবর্তে, আপনি যদি কাজ শেষে অর্থ দেয়া হয়, তবে আপনার বেতন অবশ্যই কমপক্ষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরির সমতুল্য হতে হবে৷
আপনার বেতন থেকে ট্যাক্স এবং জাতীয় বীমা কেটে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে একটি পেস্লিপ দেয়া হবে৷
আপনার মজুরি থেকে অন্য কোন কারণে অর্থ কাটার কথা নয়, যদি আপনার চুক্তিতে সে সম্পর্কিত কোনো কিছু লেখা না থাকে৷ যেকোনো চুক্তি লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে৷
এমনকি আপনি যদি কিছুতে সম্মতও হন, তারপরেও একজন নিয়োগকর্তা আপনার অর্জিত অর্থ থেকে কোনো অর্থ কাটতে পারবেন না, যদি আপনি ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম উপার্জন করেন৷ তবে আবাসন সম্পর্কিত কিছু হলে কেটে নেয়ার অধিকার থাকবে নিয়োগকর্তার৷
এমনকি বাসস্থানের জন্য একজন নিয়োগকর্তা কী পরিমাণ অর্থ কাটতে পারেন তার সীমা রয়েছে। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার নিয়োগকর্তা বাসস্থানের জন্য খুব বেশি টাকা কেটে নিচ্ছেন, তাহলে ইউনিসনের পে অ্যান্ড ওয়ার্ক রাইটস হেল্পলাইন ০৮০০৯১৭২৩৬৮ নম্বরে ফোন করতে পারেন৷
বক্স অফিসে ৪০০ কোটির ক্লাবে ‘ডাঙ্কি’, প্রভাসের ‘সালার’ কতদূর?
ইউনিসন আপনাকে জেসিডাব্লিউই-এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে বিনা খরচে অভিবাসন পরামর্শ দিতে পারে।
আপনি যদি একজন অভিবাসী কর্মী হন, তাহলে আপনাকে অসুস্থতার অর্থও দেওয়া উচিত।
আপনি যদি সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করেন, আপনি প্রতি বছরে ২৮ দিন বেতনের বার্ষিক ছুটি পাওয়ার অধিকার রাখেন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।