আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেন সংঘাতে যুক্তরাজ্যের সামরিক ভূমিকা নিয়ে আগে যা জানা ছিল, দেশটির ভূমিকা এর চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। তারা যুদ্ধে গোপন ভূমিকা পালন করেছে। কেবল যুদ্ধ পরিকল্পনা তৈরি এবং গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহই করেনি, অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ইউক্রেনের অভ্যন্তরে গোপন সেনা মোতায়েনের অনুমোদনও দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের প্রতিবেদন এমনটাই বলছে।
সংবাদপত্রটি শুক্রবার (১১ এপ্রিল) নাম প্রকাশ না করে ইউক্রেনীয় এবং ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের পশ্চিমা-সমর্থিত অভ্যুত্থানের পর থেকে কিয়েভের প্রতি লন্ডনের রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন প্রকাশ্যে থাকলেও, ইউক্রেনে সংঘর্ষ বৃদ্ধির পর তাদের সম্পৃক্ততার পরিমাণ ‘এখন পর্যন্ত মূলত গোপনই ছিল’।
টাইমস দাবি করেছে, ২০২২ এবং ২০২৩ সালজুড়ে বেশ কয়েকবার ইউক্রেনে অল্প সংখ্যক ব্রিটিশ সেনা পাঠানো হয়েছিল। রাশিয়াকে উস্কানি দেওয়া এড়াতে তারা গোপনে কাজ করেছিল। বিশেষ করে, ইউক্রেনীয় বিমানগুলোতে স্টর্ম শ্যাডো দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন এবং পাইলট ও স্থল ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
সংবাদপত্রটি লিখেছে, ইউক্রেনের বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন এবং সৈন্যদের কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শেখানোর জন্য গোপনে ব্রিটিশ সৈন্যদের পাঠানো হয়েছিল। এটি প্রথমবার নয় যে, ব্রিটিশ সৈন্যদের মাটিতে মোতায়েন করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্য কিয়েভে হাজার হাজার পরবর্তী প্রজন্মের হালকা ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (NLAW) সরবরাহ করে আসছে এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষক পাঠাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ব্রিটিশ সৈন্যদের ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করা হলেও, যুদ্ধক্ষেত্রের অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার জরুরি প্রয়োজনের কারণে যুক্তরাজ্যের ছোট ছোট গ্রুপগুলোকে পুনরায় মোতায়েন করা হয়েছিল।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের বহুল আলোচিত ‘পাল্টা আক্রমণ’ প্রস্তুত করতে ইউক্রেনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে লন্ডন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলেও জানা গেছে।
সংবাদপত্রটি দাবি করেছে, ‘পর্দার আড়ালে’ ইউক্রেনীয়রা ব্রিটেনের সামরিক প্রধানদের ‘পুতিন-বিরোধী’ জোটের ‘মস্তিষ্ক’ হিসাবে উল্লেখ করেছে। এমনকি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসকে সামরিক কর্মকর্তারা – ‘তিনি কিয়েভকে রক্ষা করেছিলেন’ বলেও উল্লেখ করতেন বলে জানা গেছে।
মস্কো ইউক্রেন সংঘাতকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন একটি প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে দেখে, যেখানে ইউক্রেনীয়রা ‘কামানের খাদ্য’ হিসেবে কাজ করে। তারা কিয়েভের হয়ে লড়াই করা বিদেশিদের পশ্চিমা সরকারগুলোর পক্ষে কাজ করা ‘ভাড়াটে সৈনিক’ হিসেবে বিবেচনা করে।
যদিও পশ্চিমা কর্মকর্তারা বর্তমান এবং প্রাক্তন ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতির কথা নীরবে স্বীকার করেছেন। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেননি। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিতে ব্রিটিশ এবং ফরাসি বাহিনীর জড়িত থাকার কথা প্রকাশ করেছিলেন।
এই মাসের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে দেখা গেছে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বাইরেও অনেক বেশি সহায়তা দিয়েছিল – এর মধ্যে দৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রের সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং যৌথ কৌশল পরিকল্পনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।