আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সেরা ছাত্রী (ভেলেডিক্টোরিয়ান) আসনা তাবাসসুমের বক্তৃতা বাতিল করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টের কার্যালয় থেকে ই–মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’র কারণ দেখিয়ে তাবাসসুমের বক্তৃতা বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
ইনস্টাগ্রামে ইউএসসির এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, যদিও আমি স্নাতকে পড়ছি। আমি এ ধরনের বিষয় শুনতে চাই না। অন্য কলেজের মতো আমিও আমার কলেজ জীবনের চার বছর সম্পর্কে শুনতে চাই। আর এটা চাওয়া কি ভুল?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আরেকজন লিখেছেন, অ্যালামনাইয়ের সদস্য হিসেবে আমি সত্যিই খুব লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি বিগত বছরগুলোতে কথা বলার জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় আসা বিলিয়নিয়ার ও রাজনীতিবিদদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রীর (ভেলেডিক্টোরিয়ান) সমাবর্তন বক্তৃতার জন্য ভাড়া নিতে পারেন। কেন ঘৃণার জয় হয়?
অন্য আরেকজন লিখেছেন, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বর্ণবাদী প্রতিষ্ঠান। এটিকে ইসরাইল অর্থায়ন করে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত।
এ ধরনের সেন্সরশিপ দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া কাপুরুষোচিত কাজ করেছে বলে মনে করেন আরেক শিক্ষার্থী।
আরেকজন লিখেছেন, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া গণহত্যা সমর্থন করে।
এ বছর ইউএসসির ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয়-মার্কিন তরুণী আসনা তাবাসসুম। বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল বিভাগ থেকে তিনি সিজিপিএ ৩.৯৮ (৪.০–এর মধ্যে) পেয়েছেন।
‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’র কারণ দেখিয়ে তাবাসসুমের বক্তৃতা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন তাবাসসুম। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তার ওপর কোনো হুমকির প্রমাণ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, শিক্ষাজীবনে ভালো ফল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে ভেলেডিক্টোরিয়ান স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনিই বক্তৃতা দেন।
তাবাসসুমের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের ‘বায়ো’তে ফিলিস্তিনপন্থি একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া। মূলত এ ‘অভিযোগেই’ তাকে ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত করার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের একাংশ। ফলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাবাসসুম বক্তৃতা দিলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে তার অংশটি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় আসনা তাবাসসুমও কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-লস অ্যাঞ্জেলেসের (সিএআইআর-এলএ) মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তাবাসসুম বলেন, ইউএসসির ২০২৪ সালের ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়ে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এটা আমার পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক ও সহপাঠীদের জন্য উদযাপনের সময় হওয়ার কথা ছিল। অথচ মানবাধিকারের প্রশ্নে আমার আপসহীন অবস্থানের কারণে মুসলিমবিরোধী, ফিলিস্তিনবিরোধীরা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত আমাকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। যারা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছে, তারা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু বিস্মিত হয়েছি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার চার বছরের ঘর কীভাবে আমাকে অস্বীকার করল?’
তাবাসসুম আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তার ওপর কোনো হুমকির প্রমাণ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। বরং ঘৃণা ছড়ানোকে সমর্থন দিয়েই তারা ক্যাম্পাসে ভয়ের উদ্রেক করেছে।
তাবাসসুম বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশলে পড়লেও মাইনর করেছেন ‘গণহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ে। তাই ফিলিস্তিনিসহ পৃথিবীর সব মানুষের ন্যায়বিচারের পক্ষে নিজের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে তার।
তাবাসসুম বলেন, ভেলেডিক্টোরিয়ান হিসেবে সহপাঠীদের অনুরোধ করব, প্রচলিত ধারণার বাইরে বের হও। এমন একটা পৃথিবীর জন্য কাজ করো, যেখানে মানুষের সমতা আর মর্যাদা রক্ষার চেয়ে ঘৃণা ছড়ানোটা বড় হয়ে উঠবে না। আদর্শগত বিভেদ থাকলেও আমি সেটা আলোচনা ও (পরস্পরকে) জানার মাধ্যমেই সমাধান করতে চাই, গোঁড়ামি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।