জুমবাংলা ডেস্ক : উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পূর্ণমাত্রায় চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা থেকে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। আর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মতিঝিল থেকে মেট্রোরেল ছেড়ে রাত ৯টায় উত্তরা স্টেশনে গিয়ে থামছে। মেট্রোরেলের পূর্ণমাত্রার প্রথম দিনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক যানে স্বস্তিতে চলাচলের সুযোগ পাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। তবে শুরুতেই চার চ্যালেঞ্জে পড়েছে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা। যার সমাধানে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কারিগরি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল দেশে প্রথম হওয়ায় যাত্রীদের এই যানের বিষয়ে অনেক অনভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে নিয়মিত যাত্রীরা বিষয়গুলো অবগত হয়েছেন। এর পরও বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কিছু যাত্রীসংশ্লিষ্ট বিষয়। কিছু বিষয় যান্ত্রিক। অন্যকিছু সমস্যাও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, মেট্রোরেলের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে; লিফটের অব্যবস্থাপনা, ভবঘুরেদের উপদ্রব, যান্ত্রিক ত্রুটি ও যাত্রীদের কোচের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়েও হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ধৈর্যসহকারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকে তারা কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামনে সরকারকে আরও ভুগতে হবে। যে পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে, এভাবে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে সমাধান করা সম্ভব হবে না। বরং দিন দিন মেট্রোরেল পরিচালনার সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এসব কারণে ঢাকার সবচেয়ে জনবসতি ও জনপ্রিয় করিডরে মেট্রোরেল নির্মাণ করেও সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি গুনতে হবে। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী পেশাজীবীদের দিয়ে মেট্রোরেল পরিচালনা করা হয়ে থাকে। যেমনভাবে বিমানবন্দর, পোর্ট, পাঁচ তারকা হোটেল ও অভিজাত হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা সব সময় সেভাবেই হয়ে থাকে। কিন্তু সেদিকে না দিয়ে অদক্ষ সরকারি জনবল দিয়ে মেট্রোরেল পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। এটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত। এর চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। সামনে যান্ত্রিক ত্রুটি আরও বাড়বে। এটার কূলকিনারা করতে পারবে না কর্তৃপক্ষ।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এই প্রসঙ্গে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের শুরুতে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল (জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন, ট্রেন চালু করা ও দুই অংশের সমন্বয়)। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেট্রোরেল পূর্ণমাত্রা চলাচল শুরু করেছে। এখন মেট্রোরেল পরিচালনায় নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সেসব ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের যান্ত্রিক ত্রুটি সাময়িক। এটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। এটা সামনের দিনে আরও কমে আসবে। যাত্রীদের অভ্যাস পরিবর্তনে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এজন্য গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে।
মেট্রোরেলের যান্ত্রিক ত্রুটি : প্রায়ই মেট্রোরেলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। ত্রুটির কারণে ওই ট্রেন সরিয়ে অন্য ট্রেন আনতে হচ্ছে। এতে মেট্রোরেলের চলাচলের সময় ঠিক থাকছে না। ৮ থেকে ১০ মিনিট অন্তর মেট্রো ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও ২০ থেকে ২৫ মিনিট অন্তর মেট্রো ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া মেট্রোস্টেশনের গেট ও মেট্রো কোচের গেট আগে-পরে বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে যাত্রীরা মেট্রোস্টেশনের গেটে আটকে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
ডিএমটিসিএল এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনভিজ্ঞ লোকবল দিয়ে মেট্রোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারকে পেশাদারি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
যাত্রীরা কোচের শৃঙ্খলা মানছেন না : মেট্রো ট্রেন কোচের চারটি দরজা রয়েছে। এজন্য যাত্রীরা দ্রুত ওঠানামা করতে পারেন। এর পরও যাত্রীরা ট্রেন কোচের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে ভেতরে জায়গা ফাঁকা থাকলেও অন্য যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারছেন না। প্রতিটি কোচে ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ওঠার কথা থাকলেও, তার চেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
মেট্রো কোচের এই জটিলতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ চাপ প্রয়োগ করে যাত্রীদের ভেতরে নেওয়ার কথা চিন্তা করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জাপান, তাইওয়ান ও চায়নার মেট্রোতে চাপ প্রয়োগ করে যাত্রীদের ভেতরে ঢোকানো হয়। ঢাকার মেট্রোর ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ তা করবে। তবে এই পর্যায়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে। সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ডিএমটিসিএলের এ বিষয়ে ভিন্নমত গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হকের। তিনি বলেন, ‘চাপ প্রয়োগে লোক ভেতরে ঢোকানোর কাজটি পেশাদারি কাজ। মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা পেশাদারি উপায়ে করা হচ্ছে না। এজন্য আমার ধারণা, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের চাপ দিয়ে ভেতরে ঢোকানোর কাজ করতে গেলে চরম বিশৃঙ্খলা বাধতে পারে। মারামারির ঘটনাও ঘটার শঙ্কা রয়েছে।’
যুবকরা চড়ছেন লিফটে : সিঁড়ি, এস্কেলেটর ও লিফট এভাবে মেট্রোস্টেশনে ওঠানামা করা যায়। যুবক ও সক্ষমরা চলাচল করবেন সিঁড়ি দিয়ে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাদের অসুবিধা, তারা এস্কেলেটর ব্যবহার করবেন। আর প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেট্রোরেল যাত্রীদের স্টেশন থেকে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়ে থাকে। এর পরও দেখা যাচ্ছে, তরুণ, যুবক ও সক্ষম ব্যক্তিরা লিফটে চড়ছেন বেশি। তাদের বোঝানোর পরও তারা মানছেন না। এটা নিয়ে চরম বিপাকে কর্তৃপক্ষ। এখনো পর্যন্ত লিফটের সক্ষম যাত্রীদের বুঝিয়ে যাবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তবে এর পরও কাজ না হলে কঠোর অবস্থানের চিন্তা করছেন তারা।
ভবঘুরেরা নষ্ট করছে মেট্রোস্টেশন : মেট্রোস্টেশন ও আশপাশে ভবঘুরেদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। প্রায় তাদের মেট্রোস্টেশন, মেট্রো প্রকল্পের রেলিংয়ের ভেতরে তাদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গায় তারা মলমূত্রও ত্যাগ করছে। এতে করে মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা নোংরা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএল জানায়, ভবঘুরেদের মেট্রোস্টেশন ও প্রকল্প এলাকার সংরক্ষিত এলাকা থেকে সরাতে খুবই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা ভবন ঘুরে ট্রাকে করে উঠিয়ে নিয়ে ঢাকা মহানগরের বাইরে রেখে আসছেন। প্রতিনিয়ত তারা এ কাজ করছেন। পরে তারা আবার এদিকে চলে আসে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।